শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ বিশ্বব্যাংকের সংস্কার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সংসদীয় কমিটি বলেছে, এসব প্রস্তাব মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার অভিপ্রায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাড়ি তৈরি বা শিক্ষার সুযোগের নামে বিশ্বব্যাংক যেন ‘ধানাইপানাই’না করতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আলোচিত বিষয় সম্পর্কে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, আমরা কমিটিকে বলেছি, বিশ্বব্যাংক এ ধরনের ধানাইপানাই করে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করতে চায়। রোহিঙ্গাদের সেটেলমেন্টের জন্য কোনো প্রস্তাব মানা যাবে না। আমরা স্পষ্টতই এর বিরোধিতা করেছি। খুব কঠোরভাবে বলেছি, বিশ্বব্যাংকের ‘চক্করে’ যেন আমরা না পড়ি।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হবে, আমরা তাদের সাময়িক জায়গা দিয়েছি। আপনারা তাদের মিয়ানমারে ফেরতের ব্যবস্থা যাবতীয় করুন। আমাদের এখানে থাকার জন্য তাদেরকে ভবন তৈরি করে দেবেন, তাদের চাকরির সুযোগ করে দেবেন, জমি কেনার সুযোগ দেবেন এসব ‘ধানাইপানাই’ চলবে না। বিশ্বব্যাংক তাদের পড়াশোনার কথা বলছে। এটি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে কেন? মিয়ানমারেই তো এখনও ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে, আগে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করুন। 

তিনি জানান, সংসদীয় কমিটির অবস্থান হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেকোনো আলোচনায় মন্ত্রণালয় যেন বলে, তারা (রোহিঙ্গা) শরণার্থী নয়, বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী। কাজেই আলোচনার প্রথম এজেন্ডা হবে, তাদের কীভাবে ফেরত পাঠানো যাবে।  

মিয়ানমারে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সেদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি নাকি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তারা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। তবে, কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংককে প্রশ্ন করেছে, তারা বাংলাদেশকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে কেন? এখানে তাদের জমি কেনার কথা বলা হচ্ছে কেন? এ প্রস্তাবগুলো বিশ্বব্যাংক মিয়ানমারকে দিক।
 
বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শনে গিয়ে খুশি হয়েছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ ভাসানচরের মতো করার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা সেটা কেন করব? এখানকার জায়গা সংকটের কারণেই আমরা ভাসানচরে তাদের নিচ্ছি। তাছাড়া এটা আমাদের বনের জমি। তাদের কারণে আমাদের বন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ ‘রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে ১৬টি দেশের শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্ব ব্যাংক। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে মতামত চেয়ে প্রতিবেদনটি জুনের ৩০ তারিখ অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়।

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানান, সরকার ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেদনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ করা, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার শরণার্থীদের দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত।

এইউএ/আরএইচ