জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র জাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে তার জঙ্গিবাদে জড়ানোর কোনো তথ্য নেই। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’ নামক একটি উগ্রবাদী ফেসবুক আইডি বদলে দেয় জাহিদের জীবন। এ আইডির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে জাহিদ হাসান রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান আজ নব্য জেএমবির বোমাগুরু।

জাহিদের তত্ত্বাবধানে ৫০-এর অধিক নব্য জেএমবির সদস্য বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। জাহিদকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, শুধু জাহিদই শুধু নয়, তার মতো অনেক তরুণ নিজের সুন্দর ভবিষ্যতকে নষ্ট করে ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’ আইডির উগ্রবাদী পোস্ট এবং ভিডিও দেখে জঙ্গিবাদের মতো বিপথে পা বাড়িয়েছে।

সিটিটিসির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’ নামে ফেসবুক আইডির মাধ্যমে উগ্রবাদী প্রচারণা চালানো হলেও তা নজরে আসেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নব্য জেএমবির বোমাগুরু জাহিদকে গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে তথ্য পায় সিটিটিসি। জাহিদ জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসির কাছে স্বীকার করেছে, এ আইডির মাধ্যমে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। জাহিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইডিটি সম্পর্কে খোঁজ নেয় সিটিটিসি।

সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ফেসবুকে আইডিটির যাত্রার শুরু থেকে প্রচুর পরিমাণে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ সম্পর্কিত পোস্ট করা হতো। এসব পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণরা লাইক-কমেন্ট করত। কমেন্টে এসব পোস্টের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চলত। এসব পোস্টের মাধ্যমে যারা প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের প্রতি সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করে কমেন্ট করত তাদের চিহ্নিত করা হতো। পরে নানাভাবে নার্সিং করে তাদের জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে আসত হোয়াইট হাউসের মুফতি। আইডিটি শুরু থেকে প্রভাব বিস্তার করায় এর মাধ্যমে অনেক তরুণ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, দেশে এ পর্যন্ত উগ্রবাদী বা জঙ্গিবাদী আদর্শ ছড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। যারা জঙ্গি রিক্রুটমেন্টের সঙ্গে জড়িত আছে, তারা এসব আইডি খুলে জঙ্গিবাদের আদর্শ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এরকম আরও বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডির সন্ধান পেয়েছে সিটিটিসি। সেগুলো হলো- ‘ইমন শিকদার’, ‘আব্দুল আহাদ’, ‘আসিফ নজরুল’। এ আইডিগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী আইডি ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’।

এদিকে জঙ্গিবাদের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া এ প্রভাবশালী ফেসবুক আইডিটির পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে। সেই অ্যাডমিনের পরিচয় কি, সে কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য তাও জানার চেষ্টা করছে সিটিটিসি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আইডিটি ব্যক্তি বিশেষের নয়। কোনো জঙ্গি সংগঠন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে এ আইডি তৈরি করেছে। তবে আইডিটি এখনও সম্পূর্ণভাবে সচল আছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্ত করছে সিটিটিসি। এছাড়া আইডিটির অনলাইন জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত ইতিহাসও বের করার কাজ চলছে।

সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদে হোয়াইট হাউসের মুফতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। আইডিটি প্রথমে কে চালাত, তার নাম কি। এখন আইডিটি সক্রিয় আছে কি না। সক্রিয় থাকলে আইডিটি এখন কে চালায়- এ সংক্রান্ত তথ্য জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের আদর্শ ছড়ায় এমন কয়েকটি ফেসবুক আইডি আমরা শনাক্ত করতে পরেছি। যার মধ্যে ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’ অন্যতম। আমরা আইডিগুলোর অনলাইন জঙ্গিবাদ ইতিহাস খুঁজছি। আইডিগুলোর অ্যাডমিনদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে।

এমএসি/এসএসএইচ