দুই মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন ফেরি কয়েকবার পদ্মা সেতুর বিভিন্ন পিলারে ধাক্কা দিয়েছে। সবশেষ শুক্রবার সকালে কাকলী ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। তবে এতে সেতু অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি হয়নি।  

সেতু প্রকল্পের (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, কাকলী ফেরির ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের কোনো ক্ষতি হয়নি।  

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার টনের ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ রয়েছে পদ্মা সেতুতে। ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প বা তার সমান কম্পন সহনীয় এ সেতু। আগামী ২০০ বছর নদীতে যে ক্ষমতার জাহাজ চলবে, তা মাথায় রেখেই সেতুর নকশা করা হয়েছে নির্মাণ কাজও সেভাবেই এগিয়ে চলছে। 

পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ফেরির চেয়ে বড় নৌযান, ট্যাংকার জাহাজ ১২০০ থেকে ১৩০০ টন জ্বালানি নিয়ে বাঘাবাড়ী, আরিচা, নগরবাড়ী রুটে চলাচল করে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এ পথে জাহাজগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারলেও বারবার ফেরিই কেন পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দিচ্ছে? 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ ফেরি পুরনো। এগুলোর ইঞ্জিন খুবই দুর্বল। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও সেই সঙ্গে বাতাসের তীব্রতা থাকে। এর ওপর সেতুর পিলার নির্মাণের জন্য নদীতে পানিপ্রবাহের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে‌‌। পিলারের আশপাশে স্রোত ও পানির ঘূর্ণন বেশি। ফলে পুরনো ফেরির দুর্বল ইঞ্জিন বাতাস ও স্রোতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারছে না। তাছাড়া, চালকদের ফেরি পরিচালনার দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিতে রয়েছে তদারকির যথেষ্ট অভাব।

সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মা নদীর একটি পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার‌। নৌযান চলাচলের জন্য যা যথেষ্ট। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ দূরত্ব রাখা হয়েছে। বিভাগের প্রকৌশলীরা বলছেন, তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ প্রয়োজনীয় ক্ষমতার ইঞ্জিন দিয়ে অনায়াসে সেতুর দুই পিলারের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে চলাচল করতে পারছে। কিন্তু ফেরি চলাচলে ঘটছে যত বিপত্তি।

পরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআইডব্লিউটিসি অতিরিক্ত ও ভারী যান নিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি চালকদের সাবধানে ফেরি পরিচালনা করার নির্দেশনা দেয়াও হয়েছিল। এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  

শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতুর বিভিন্ন পিলারে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্বলতা ও দায়িত্বহীনতা কোথায় সেটাও দেখা হচ্ছে। যারা দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেরি চালাতে যে দক্ষতা  থাকতে হয় তা ফেরি চালকদের আছে কি না তা-ও দেখা হবে।  

২০ জুলাই পদ্মা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের সঙ্গে রো রো ফেরি শাহ মখদুমের ধাক্কা লাগে। এরপর ২৩ জুলাই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহজালাল ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দিলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ১০ নম্বর পিলারে সজোরে ধাক্কা খায়। এ ঘটনায় সেতুর পিলারের পানির লাগোয়া অংশে পাইল ক্যাপ বা পলেস্তারা উঠে যায়। 

পিএসডি/আরএইচ