অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

রোববার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সব শহীদ সদস্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক ও সমার্থক। তার জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হত না। বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করার বহু চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির সংগ্রাম বঙ্গবন্ধু আরম্ভ করলেও ঘাতকরা তাকে তা শেষ করতে দেয়নি। 

মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ আরও বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। আজ আমরা শপথ নিই, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার। সব ধরনের সামাজিক ব্যবধান দূর করে আমাদের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সততা ও ঈমানদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ ও মুক্তির সংগ্রাম বাস্তবায়ন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের ঋণ শোধ করার এটিই অন্যতম পন্থা। 

দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ছিল অকল্পনীয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার আগেই তিনি বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা উপাধি লাভ করেন। তার অসীম সাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণেই ফিদেল কাস্ত্রো তাকে তুলনা করেছিলেন হিমালয়ের সঙ্গে। এ মহান নেতাকে হত্যার নেপথ্যে কারা জড়িত ছিল, ইতিহাস তার সাক্ষী। উত্তরোত্তর গবেষণায় এবং তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে তা ক্রমশই উন্মোচিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদেরকে আমাদের চিনে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনের কারিগর ও খুনিদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হয়েছে ঠিক মীরজাফরদের মতোই। অতীতে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতাকারীদের অনেককেই এখন স্বার্থসিদ্ধির ধান্দায় বর্ণচোরার ভূমিকায় দেখা যায়। জাতীর স্বার্থে তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকতে হবে। 

দুদকের অপর কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক তার আলোচনায় বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন, কৃষকরা তো ঘুষ খান না, অফিসাররা কেন খান। আমাদের দেশে এখন অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে কিছু টাকা পাচার হয়ে যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যায়। উন্নয়নের পুরো সুফল পেতে হলে আমাদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। সুতরাং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন। শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।

আলোচনায় দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সোনার বাংলা বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের রোড ম্যাপ নিয়ে কথা বলেন।  

আলোচনা শেষে ১৫ আগস্ট শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জীবিত সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে দেশের অব্যাহত উন্নয়ন অগ্রযাত্রা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

আরএম/আরএইচ