প্রশান্ত কুমার হালদার

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে চালানো অনুসন্ধানে ৬২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুদক সচিব মু. আনোয়ারুল হাওলাদার গণমাধ্যমে জানান, কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করে এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬২ জনের নাম পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘পি কে হালদারের বিষয়টি এখন অনেক বড়। দেখা যাচ্ছে, তার বিভিন্নজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মোটামুটি ৬২ ব্যক্তির সঙ্গে তার লিঙ্ক বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট এই ৬২ জনের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকার বেশি জব্দ করা হয়েছে। তার আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার।

গত বছরের জানুয়ারিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। এই মামলাটির তদন্ত করছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। ওই মামলার সংশ্লিষ্টতায় বুধবার (১৩ জানুয়ারি) তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে তিনদিনের রিমান্ড নিয়েছে দুদক।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, অবন্তিকা বড়ালকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হয়তো পরে জানা যাবে পি কে হালদারের কী পরিমাণ অবৈধ সম্পদ তার কাছে রয়েছে।

এর আগে মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আত্মীয় ও আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শংখ ব্যাপারীর নামে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়। যা পি কে হালদারের অর্থায়নে কেনা হয়েছিল বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।  

আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বিদেশ পালানোর পর গত বছরের ৮ জানুয়ারি দুদক তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পি কে হালদার ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা, পি কে হালদারের হিসাবে ২৪০ কোটি টাকা ও তার মা লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হয় ১৬০ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে পি কে হালদার শুধু ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই দুই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়েছেন। এসব টাকা দিয়েই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা কেনা হয়। তবে ঋণ নেওয়া পুরো টাকার হদিস মিলছে না। পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তা করায় ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

 আরএম/ওএফ