মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান বন্ধ করতে দীর্ঘ দিন ধরে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। নতুন করে চিন্তা বেড়েছে মিয়ানমার সীমান্তকে কেন্দ্র করে। এবার মিয়ানমার থেকে আইস (ক্রিস্টাল ম্যাথ) দেশে প্রবেশের তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেশী দেশটি থেকে আসা আইসের চালান জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় মাদক কারবারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাতজনকে গ্রেফতার করে ডিবির গুলশান বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- নাজিম উদ্দিন, মো. আব্বাস উদ্দিন, মো. নাছির উদ্দিন, মোছা. শিউলি আক্তার, মোছা. কোহিনুর বেগম, সানজিত দাস ও মো. হোসেন আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম আইস, ৬৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইসসহ মাদক কারবারিদের গ্রেফতারের বিষয়ে কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে আইসের (ক্রিস্টাল ম্যাথ) মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল মাদকও দেশে আসছে। এই মাদকটি প্রথমে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেটকারে আনলোড করে ঢাকায় প্রবেশ করে। পরে গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আইসসহ মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়। ইয়াবার মতো মাদকটি সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে গোয়েন্দা পুলিশ মাদকটি প্রবেশে কঠোর হবে।

তিনি বলেন, গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, লকডাউনের কারণে অনেকদিন ধরে তাদের মাদক ব্যবসা মন্দা ছিল। লকডাউন শেষে তারা আইস ও ইয়াবা কক্সবাজার থেকে কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে। মংলা বন্দর অভিমুখী এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা ট্রাকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ওই মাদক কুমিল্লায় নিয়ে আসে। এরপর প্রাইভেটকার করে এগুলো ঢাকায় নিয়ে আসে।

মাদক আইস ব্যয়বহুল হওয়ায় বিত্তবান ও তাদের বখাটে সন্তানরা নিয়ে থাকে। মূলত শিশা লাউঞ্জে শিশা সেবনকারীরা এসব মাদক নিয়ে থাকেন। আইস মাদকসেবীদের কাছে ক্রিস্টাল মেথ বা ডি মেথ নামে সর্বাধিক পরিচিত। এটি একটি স্নায়ু উত্তেজক মাদক। আইস অত্যন্ত ভয়াবহ মারাত্মক উত্তেজনাকর ও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্যয়বহুল মাদক। এটি গ্রহণে হরমোন উত্তেজনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

চক্রটি কতদিন ধরে আইস দেশে নিয়ে আসছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এই মাদকসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। ইতোমধ্যে এই চক্রটিকে গ্রেফতার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা জানতে পরব তারা কতদিন ধরে কাজ করে। আর যারা ইয়াবা ব্যবসা করে তারাই আইসের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

রাজধানীর কোন কোন অভিজাত এলাকায় আইস বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকায় এই মাদক সেবনকারীর পরিমাণ বেশি। এই মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আইস খুব অল্প পরিমাণ সেবন করলে অনেক নেশা হয়। তবে বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় এটি দেশে তেমন দেখা যায় না।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

গতকাল আরেকটি অভিযানে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ২৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে বলে ডিবি প্রধান জানান।

তিনি বলেন, আরেক অভিযানে মিরপুর গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেফতার দুজন হলেন মোছা. রাশিদা বেগম ও মোছা. মৌসুমি আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।

এমএসি/ওএফ