অগ্রিম টাকা পুরোটা পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ই-অরেঞ্জ গ্রাহকের আত্মসাৎ করা প্রায় ১১শ কোটি টাকা কী করেছে তা জানতে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গুলশান থানায় যে মামলা করা হয়েছে তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ মামলার আসামিসহ বেশ কয়েকজনের তথ্য ব্যাংক হিসাব দেখা হচ্ছে। ই-অরেঞ্জ বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে কি-না এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা হলেও আমরা তাদের মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। পাশাপাশি তারা কী কারণে, কেন হঠাৎ করে (১ জুলাই) মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল ওই বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়াও অনুসন্ধানে তাদের মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা করবে সিআইডি। মামলার তদন্তভার সিআইডিতে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।’

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটের লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেগুলো ধরেই আমরা অনুসন্ধান করছি। বর্তমানে আমরা ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপসহ বেশ কয়েকটি সাইটের লেনদেন নিয়ে অনুসন্ধান করছি। মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

এর আগে প্রতিশ্রুত সময়ে পণ্য ও টাকা ফেরত না পাওয়ায় মঙ্গলবার ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন একজন গ্রাহক। মামলায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মোট ১১শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার মো. তাহেরুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক মামলা করেছেন। থানায় উপস্থিত থেকে তার সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন।

মামলার এজাহারে তাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি গত ২১ এপ্রিল পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জে অগ্রিম টাকা দেন। তারা নির্ধারিত তারিখে পণ্য সরবরাহ করেনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। নিজেদের ফেসবুক পেজে বারবার নোটিশ দিয়ে সময় চেয়েছে। কিন্তু পণ্য ও টাকা দেয়নি। সর্বশেষ গত সোমবার গুলশান-১ এর ১৩৬/১৩৭ নম্বর রোডের ৫/এ নম্বর ভবনে অবস্থিত ই-অরেঞ্জের অফিস থেকে পণ্য ডেলিভারির কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এছাড়া ই-অরেঞ্জ বিভিন্ন আউটলেটের গিফট ভাউচার বিক্রি করেছিল, সেগুলোর টাকা আটকে রাখায় আউটলেটগুলো ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দিচ্ছে না। 

তাহেরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাচ্ছি না, বরং প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। কোনো পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এক লাখ ভুক্তভোগীর প্রায় ১১শ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে।

মামলায় অর্থ আত্মসাৎকারী হিসেবে যেসব আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ, সোনিয়া মেহজাবিনসহ ই-অরেঞ্জের সব মালিক। বুধবার (১৮ আগস্ট) তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী। 

এর আগে, গত মঙ্গলবার মামলার পর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর সিদ্দিকের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ৪২০ ও ৪০৬ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। ৪০৬ ধারায় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল, অর্থ জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর প্রতারণার ৪২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড।

অর্ডার করা পণ্য পেতে গত সোমবার রাজধানীর গুলশান-১ এর সড়ক অবরোধ করেন ই-অরেঞ্জের গ্রাহকরা। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। সড়ক অবরোধের এক পর্যায়ে রাতেই বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা তার সঙ্গে দেখা করতে মিরপুর-১২ তে তার বাসায় যান। ওই সময় মাশরাফি ই-অরেঞ্জের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং গুলশান থানাকে মামলা নেওয়ার অনুরোধ করেন। 

এআর/ওএফ