রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম

সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠীর কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত ২০ বাংলাদেশির অবস্থান নিশ্চিত করেছে দেশটির কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বে থাকা উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস। তারা বলছে, ২০ বাংলাদেশি নিরাপদে আছেন। তবে খুব শিগগিরই তাদের দেশে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়।

উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম ‘সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত’ হিসেবে আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে উত্তাল আফগানিস্তানে বাংলাদেশিদের অবস্থান এবং তাদের দেশে প্রত্যাবর্তন, আফগান পরিস্থিতি ও দূতাবাসের কর্মতৎপরতা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

ঢাকা পোস্ট : আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশির অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছেন?

রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম : আমাদের কাছে পুরো আফগানিস্তানে ২০ বাংলাদেশি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের কর্মকর্তা, কাবুলের মোবাইল টেলিকম প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সাতজন, স্যুয়ারেজ (পয়ঃনিষ্কাশন) কোম্পানিতে কাজ করেন দুজন এবং মঈন আল মেজবাহ নামের এক বাংলাদেশি রয়েছেন।

আফগানিস্তান ছাড়ার অপেক্ষায় কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানুষের ভিড় 

তালেবানরা কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর মঈন জেল থেকে ছাড়া পান। তাসখন্দ সীমান্তের খুব কাছাকাছি মাজার-ই শরীফে রয়েছেন আবুল খায়ের নামের এক বাংলাদেশি। সর্বশেষ আমরা কাবুলে চার বাংলাদেশির অবস্থান জানতে পেরেছি। এছাড়া জেল থেকে আরও দুজন বের হতে সক্ষম হয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তারা আমাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি। তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। 

ঢাকা পোস্ট : যেসব বাংলাদেশির অবস্থান জানতে পেরেছেন তারা কারা, কোথায় অবস্থান করছেন এবং কেমন আছেন?

রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম : ব্র্যাকের কর্মীরা ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে আছেন। মোবাইল টেলিকমে কাজ করা সাতজন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হেফাজতে আছেন। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত দুজন ওই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে আছেন। এছাড়া জেল থেকে যিনি বের হতে সক্ষম হয়েছেন তিনি বর্তমানে তার এক বন্ধুর বাড়িতে আছেন। বাকিরাও নিরাপদে আছেন।

তবে সমস্যা হচ্ছে, তাদের মধ্যে একজনের ভিসার মেয়াদ শেষ। আরেকজন অর্থনৈতিকভাবে কষ্টে আছেন। যার ভিসার মেয়াদ শেষ তার বিষয়টি একটু জটিল। যিনি টাকার কষ্টে আছেন, অন্যদের বলেছি তাকে সহযোগিতা করার জন্য।

ঢাকা পোস্ট : যেসব বাংলাদেশির অবস্থান জানতে পেরেছেন তাদের কবে নাগাদ দেশে ফেরানো সম্ভব...

রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম : আফগানিস্তানের কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের ফেরানো সম্ভব নয়। দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে কথা বলব, সেই ব্যবস্থাও নেই। তাদের তাসখন্দে এনে রাখব, সেটিও করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, উজবেকিস্তান কাবুলের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। 

উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম ‘সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত’ হিসেবে আফগানিস্তানেও দায়িত্ব পালন করছেন

এখন আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। দেশটির সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত তাদের (বাংলাদেশি) দেশে ফেরানো খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিছু করা যায় কি না।
 
ঢাকা পোস্ট : বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত’ হিসেবে আফগানিস্তানের দায়িত্ব পালনে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে কি না?

রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম : এখন তো আফগানিস্তানে কোনো সরকার নেই। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে‌হেতু সরকার নেই, ওখা‌নে (আফগানিস্তান) থাক‌লেও কিছু করার থাকত না। তাদের সরকা‌রের স‌ঙ্গে যোগা‌যোগ ক‌রেই সবকিছু করতে হতো। তবে এটা নিশ্চিত করছি যে, বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, নিরাপদে আছেন।

রাজধানী কাবুলে সশস্ত্র তালেবানদের মহড়া 

ঢাকা পোস্ট : তাসখন্দ দূতাবাসের বর্তমান কর্মতৎপরতা সম্পর্কে যদি বলতেন...

রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম : তালেবান বাহিনীর কাবুল দখলের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের তথ্য নিশ্চিত হতে অর্থাৎ তারা যাতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য দুটি হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক সেখানকার পরিস্থিতির খোঁজ নিচ্ছি। যাদের অবস্থান জানতে পেরেছি তারা যেন নিরাপদে থাকেন সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সেখানে আর কোনো বাংলাদেশি আছেন কি না, সেই তথ্য বের করার চেষ্টা করছি।

ঢাকা পোস্ট : আফগানিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দূতাবাসের কাছে সর্বশেষ কী তথ্য রয়েছে?

রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম : আমরা জানতে পেরেছি, সেখানে মানুষজন যে যার মতো করে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সবাই নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এনআই/এমএআর