স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় চিড়িয়াখানায় যে ‘ট্রাভেল কার’ যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ, সেটি আপাতত যুক্ত হচ্ছে না। আর তাই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে দর্শনার্থীদের। স্বপ্ন পূরণে অপেক্ষা করতে হবে আরও একটি বছর।

তবে আশার খবর হলো, এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে চিড়িয়াখানায় থাকা শিশু এলাকা। সেখানে যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রিক ট্রেন এবং মেরি গো রাউন্ড। সেইসঙ্গে আয়োজন হতে পারে জীবন্ত প্রজাপতি দেখার।

এভাবে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে ইলেকট্রিক ট্রেনের বগি-ইঞ্জিন

আগামী ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বে পদার্পণ করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয় চিড়িয়াখানা যেন এক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য চিড়িয়াখানাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে এক মহাপরিকল্পনা। তা বাস্তবায়ন হলে চিড়িয়াখানা হবে আধুনিক এবং আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। তবে এ মহাপরিকল্পনার তৈরির কাজ এ বছর জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে সেই কাজ। শুধু মহাপরিকল্পনা তৈরি করতেই আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, এই মহাপরিকল্পনার টিম লিডার সিঙ্গাপুরের কনসালটেন্ট ফার্ম বার্নাড অ্যাডিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড। করোনায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বার্নাড অ্যাডিসন বাংলাদেশে আসতে না পারায় কাজের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। ওই পরিকল্পনায় ইনসেপশন রিপোর্ট, ইন্টারিং রিপোর্ট, ড্রাফট মাস্টার প্ল্যান এবং মাস্টার প্ল্যান নামে চারটি অংশ রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ইনসেপশন রিপোর্ট, ইন্টারিং রিপোর্টের কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজ শেষেই বাংলাদেশে আসার কথা ছিল বার্নাড অ্যাডিসনের। যেহেতু করোনার কারণে তিনি আসতে পারছেন না, তাই বাকি কাজগুলো জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে শেষ করার কথা চিন্তা করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তবে মহাপরিকল্পনার মেয়াদ কর্তৃপক্ষ আর কোনোভাবেই বাড়াতে আগ্রহী নয়।

মহাপরিকল্পনায় বিলম্ব হওয়াতে সব কাজ পিছিয়ে পড়েছে। তাই দর্শনার্থীদের আপাতত ট্রাভেল কারে চড়ে চিড়িয়াখানা দেখা, লেকের পানিতে ডলফিন শো দেখা এবং ভাসমান রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার সুযোগ মিলছে না।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, শিশুপার্কে বাহারি ধরনের জীবন্ত প্রজাপতি দেখার ব্যবস্থার করা হচ্ছে। যা বাস্তবায়ন করতে মাত্র তিন মাস সময় লাগবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মিললেই এটির কাজ শুরু হবে।

এদিকে গুচ্ছ দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নির্মিত আলাদা দুটি পিকনিক স্পট বন্ধ রয়েছে। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, যারা পিকনিক স্পট ভাড়া নেন, তারা সেখানে উচ্চ শব্দে গান বাজনা শোনেন। ফলে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের সমস্যা হয়। এছাড়া স্পট দুটি লেকের পাশে হওয়ায় তারা বিভিন্ন ময়লা লেকের পানিতে ফেলে পানি দূষণ করেন। সার্বিক বিবেচনায় এটি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার ফি আগের মতো ৫০ টাকাই আছে। এদিকে গত ৯ আগস্ট ‘বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। খসড়ায় ফি ছাড়া চিড়িয়াখানায় ঢুকলে দুই মাসের জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধীদের চিড়িয়াখানা দেখার জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রত্যেক রোববার চিড়িয়াখানার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। তবে প্রত্যেক মাসের প্রথম রোববার দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট ফ্রি। এখানে অগ্রাধিকার থাকবে শিশুদের জন্য।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আব্দুল লতীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা এই বিধিনিষেধে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব এটি ধরে রাখতে। পাবলিক টয়লেটের সামনে সিগারেট বিক্রির যে অভিযোগ ছিল, সেটিও টোটালি বন্ধ করতে পেরেছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মহাপরিকল্পনা তৈরি করে কাজ শুরু করার। কিন্তু করোনা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এখন জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে কনসাল্টেন্ট ফার্মের সঙ্গে কথা বলে কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কোনোভাবেই এই কাজ আর পেছাতে দেওয়া হবে না।

এমএইচএন/এসএম/জেএস