ঘাতকরা জানত বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে সেই ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের আশঙ্কা যথার্থই হয়েছিল। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল পুলিশ হবে জনগণের। আজ আমাদের পুলিশ সেই জায়গাটিতে গিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে “বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন”-এর আয়োজনে রাজধানীর রমনায় পুলিশ কনভেনশন হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একথা বলেন।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও অতিরিক্ত আইজিপি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রাতে আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কথা মনে আসলে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীর কথা বলি। তিনি একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন। মাত্র পঞ্চান্ন বছর জীবিত ছিলেন তিনি। এ পঞ্চান্ন বছর বয়সে তিনি ৩ হাজার ৫৩ দিন কারাগারে ছিলেন। তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করে গেছেন। এই ৫৫ বছরে তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে গিয়েছিলেন তিনি।”

মন্ত্রী বলেন, “ছয় দফা নিয়ে সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে জেলাতেই যেতেন মিটিং শেষ করে নামলেই ওয়ারেন্ট এসে হাজির হত। ডিফেন্স পাকিস্তান রুলে তাকে আটক করা হতো।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যখন বলি, বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অনেকে এর বিরোধিতা করেন। আজকে আমাদের কাছে যে রেকর্ডপত্র রয়েছে, আমাদের প্রিজনে যে রেকর্ডপত্র রয়েছে, এসবিতে যে রেকর্ডপত্র রয়েছে তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে তিনি জেলে বসে নির্দেশনা দিতেন, চিঠি লিখতেন, কীভাবে ভাষা আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর ৫৪, ৬৬ ও ৬৯ এর আন্দোলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জনগণের কাছ থেকে স্বাধীনতার ম্যান্ডেট আদায় করেছিলেন।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু জনগণের পুলিশ গড়তে চেয়েছিলেন। আজ আমাদের পুলিশ সেই জায়গাটিতে গিয়েছে। তারা আজ যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন থেকে আরম্ভ করে সবকিছু তারা সমানতালে করে যাচ্ছে বলে আমরা দেশকে শান্তির দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।“”

ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে যখন ১৯৭১ সালে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশ ছিল ঘাতক কবলিত। বন্দুকের নলেন নিচে, বেয়নটের নিচে বাংলাদেশকে চাপিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের যে প্রতিবাদের ভাষা, শোকের ভাষা, সেটি আমরা প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু আমরা সবাই জানি, এক সময় প্রতিবাদের যে বিস্ফোরণ ঘটেছে। শোক থেকে শক্তির যে জাগরণ ঘটেছে সে জাগরণ আজকে বাংলাদেশকে একটি সমুন্নত আসনে আসীন করেছে। এবং আগামী দিনের যে স্বপ্নযাত্রা, সেই স্বপ্নযাত্রায় আমরা সবাই আজকে শামিল।”

সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, “বঙ্গবন্ধু দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুখময় মুহূর্ত হল বাঙালীর স্বাধীনতা। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।”

তিনি বলেন, “ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ রাখা হয়েছিল, যা একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।”

আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, “১৫ আগস্ট অবশ্যই প্রতিটি স্বাধীন আত্মমর্যাদাবান বাঙালীর জন্য চরম লজ্জা ও বেদনার। চার হাজার বছরে বাঙালির নিজেদের স্বাধীন করার কোনো ইতিহাস নেই। চার হাজার বছর ধরে বাঙালি ছিল নির্যাতিত, বঞ্চিত। ক্ষুধা, জরা-দারিদ্র ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী।”

তিনি বলেন, “এদেশের প্রতিটি খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি, কাদা মাটির গন্ধ মাখা মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ । এর সঙ্গে আরেকটা কথা বলেছিলেন ‘মুক্তির সংগ্রাম’। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে।”

আইজিপি বলেন, “আমরা সৌভাগ্যবান। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী সুযোগ পেয়েছেন এবং দেশের সেবা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন।”

সভাপতির বক্তব্যে মনিরুল ইসলাম বলেন, “বাঙালীর স্বাধীনতা যেমন বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন যার মহান স্থপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঠিক তেমনি বাঙালী জাতির জন্য সবচেয়ে লজ্জা ও কলঙ্কের দিন হল ১৫ আগস্ট। সেদিন কুলাঙ্গাররা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।”

অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন এবং সকল পুলিশ ইউনিট থেকে অন্যান্য কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

এর আগে সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন ও জাতির পিতার জীবনের ওপর নির্মিত লাইট আর্টস প্রদর্শন করা হয়।

জেইউ/এইচকে