ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম

‘ক্লিয়ার টু ল্যান্ড রানওয়ে ওয়ান-ফোর, বাংলাদেশ সিক্স-ওয়ান-সিক্স।’ গত ১১ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ৬১৬ ফ্লাইটটিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এনেছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম। অবতরণের সময় এটিই শেষ বাক্য ছিল তার। ঢাকার আকাশ থেকে ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) এ কথাটি বলেন নওশাদ। 

ক্যাপ্টেন নওশাদ ১১ আগস্টের পরেও ফ্লাইট পরিচালনা করেন। তবে তিনি এটিসির সঙ্গে আর কথা বলেননি। পাশে থাকা পাইলট কথা বলেছেন। তাই এটিই ক্যাপ্টেন নওশাদের সর্বশেষ কথপোকথন। 

বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্রের মাধ্যমে পাইলট ও এটিসির কথোপকথনের রেকর্ডেড কপি পেয়েছে ঢাকা পোস্ট। 

সর্বশেষ ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইট অবতরণের আগে এটিসির কাছে অনুমতি চেয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ। সূত্র জানায়, সেদিন নওশাদ ৩ হাজার ফিট উচ্চতায় ঢাকার আকাশ থেকে এটিসির কাছে অবতরণের অনুমতি চান। এটিসি তাকে রানওয়ে নম্বর ওয়ান-ফোর (১৪) এ অবতরণের অনুমতি দেন। এটিসির অনুমতি পাওয়ার পর ওপাশ থেকে ক্যাপ্টেনের শেষ বাক্য ছিল, ‘ক্লিয়ার টু ল্যান্ড রানওয়ে ওয়ান-ফোর, বাংলাদেশ সিক্স-ওয়ান-সিক্স’। বাংলাদেশ-৬১৬ বলতে, এখানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ফ্লাইট নম্বরকে বুঝিয়েছেন ক্যাপ্টেন।

এছাড়া এটিসির আর্কাইভ থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদের ২২ মার্চের বিজি-৪৩৩ ঢাকা থেকে কক্সবাজারের ফ্লাইট উড্ডয়ন ও ৩০ জুনের বিজি-৬১৫ ঢাকা টু চট্টগ্রামের ফ্লাইটের উড্ডয়নের ভিডিও এবং এটিসির সঙ্গে কথোপকথন প্রকাশ করেছে রয়েল বেঙ্গল এভিয়েশন নামে একটি ফেসবুক পেজ। 

৩০ আগস্ট দুপুরে ভঅরতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে মারা যান ক্যাপ্টেন নওশাদ। আজ বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ নাগপুর থেকে ঢাকায় আনা হয়। 

দুপুর ২টায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সদর দফতর বলাকায় তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন বলাকা মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা কাইয়ুম। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। অংশ নেন বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ তার নিকট আত্মীয় ও বন্ধুরা।

বলাকায় নামাজে জানাজা ও শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ বনানী কবরস্থানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

গত ২৭ আগস্ট সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইট নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে ফ্লাইটটিকে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান। 

ফ্লাইটটি অবতরণের পর ক্যাপ্টেন নওশাদকে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ২ দিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে রোববার তাকে হাসপাতালের সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এসআইসিইউ) কোমায় নেওয়া হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর তার মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হয় বলে জানিয়েছিলেন কিংসওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। 

২৯ আগস্ট রাতে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমের দুই বোন। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপ্টেন নওশাদের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে মত দেন। তবে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ৩০ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে না ফেরার দেশে চলে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ।

নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের কারণে ২৭ আগস্ট জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর। তবে এটিই প্রথম নয়, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে আরেকটি দুর্ঘটনার হাত থেকে ১৪৯ যাত্রী আর সাত ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ।  
 
২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল। 

এআর/এইচকে/জেএস