হাটহাজারী মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা ইয়াহিয়া
কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ঘাঁটি বা আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম (মহাপরিচালক) হয়েছেন মাওলানা ইয়াহিয়া।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) মাদরাসার শুরা বৈঠক শেষে মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী মাদরাসার শুরা সদস্য ও ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী।
এদিকে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমতিয়াজ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী বলেন, শুরা কমিটির বৈঠকে প্রথম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামীকে মাদরাসার মহাপরিচালক করা হবে। কিন্তু ঘোষণা করার আগেই বৈঠক চলাকালে আমাদের কাছে খবর আসে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তাই শুরা কমিটির বৈঠকে মাওলানা ইয়াহিয়াকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুরা কমিটির বৈঠকে মঈনে মুহতামিম পদে মাওলানা মুফতি জসিমকে নির্বাচিত করা হয়েছে। আর শিক্ষা পরিচালক করা হয়েছে মাওলানা কবিরকে। মাওলানা আবদুস সালামের মৃত্যুর কারণে শুরা কমিটির বৈঠকটি আজ মুলতবি করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় বহুল প্রতীক্ষিত শুরা বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে শুরা কমিটির ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফী। শুধু এই মাদরাসা নয়, দীর্ঘদিন পুরো কওমি অঙ্গনেই ছিল তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব।
আহমদ শফী যখন মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন তখন এর সহকারী মহাপরিচালক ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এরইমধ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমির ছিলেন আহমদ শফী এবং মহাসচিব ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
২০২০ সালের ১৭ জুন বাবুনগরীকে মাদরাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় মাওলানা শেখ আহমদকে।
নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন আল্লামা শফী। পরদিনই রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
শফীর মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদরাসার দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। তখন শুরা কমিটির এক বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মাদরাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে রাখা হয়- মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামী, আল্লামা শেখ আহমেদ ও মাওলানা ইয়াহিয়াকে। তবে অদৃশ্যভাবে বাবুনগরীই মাদরাসার পরিচালনাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতেন বলে জানা যায়। যে কারণে মহাপরিচালক পদে কেউ না থাকলেও শূন্যতা অনুভব করেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
তবে গত ১৯ আগস্ট জুনায়েদ বাবুনগরী মারা গেলে মাদরাসা পরিচালনায় আবার নতুন করে সংকট দেখা দেয়। তাই আজ শুরা কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় এক বছর পর মহাপরিচালক পেল ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদরাসা।
কেএম/জেডএস/জেএস