রাজধানীতে টিকা কেন্দ্রে আগের মতো ভিড় দেখা যাচ্ছে না। এখন এসএমএস পাওয়ার পরই মানুষ কেন্দ্রে আসছেন। ফলে শৃঙ্খলা ফিরেছে টিকাকার্যক্রমে। এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ টিকা পাচ্ছেন। সুশৃঙ্খলভাবেই টিকাকার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএসইউ’র টিকা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. খোরশেদ আলম।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে তিনি এ কথা বলেন। ডা. খোরশেদ আলম বলেন, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আমরাও এ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এখন আমাদের কেন্দ্রে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ টিকা নিচ্ছে, যাদের অধিকাংশই প্রবাসী। এক হাজার থেকে ১২শর মতো দেশীয় মানুষও টিকা গ্রহণ করতে পারছে। এখানে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ চলছে। ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া বুধবার শেষ হয়েছে। কিছু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে সেগুলোও দ্রুত দেওয়া হবে। এছাড়া প্রথম ডোজের সিনোভ্যাকের টিকাও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সিনোভ্যাকের টিকা গ্রহণ করতে অনেকেই অনাগ্রহ প্রকাশ করছে, তাদের ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই আগ্রহ নিয়েই টিকা নিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অনেকেরই পছন্দের বিষয়টি আমরা খেয়াল করেছি। কেউ হয়ত সিনফার্মের টিকাটি পছন্দের বাইরে রাখতে চাচ্ছেন। অধিকাংশই মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের টিকা গ্রহণ করতে চাইছে। এক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতার কথাও চিন্তা করতে হবে। এ মুহূর্তে আমরা প্রবাসীসহ যাদের জরুরিভিত্তিতে টিকাগ্রহণ দরকার তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেক প্রবাসীকেই বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ওই দেশের নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট টিকা গ্রহণ করতে হচ্ছে, সে বিষয়গুলো আমরা মাথায় নিয়েই টিকা দিচ্ছি।

এর আগে বিএসএমএমইউর টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বুথ থেকে পর্যায়ক্রমে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিচ্ছেন মানুষ। মূল প্রবেশদ্বারেও দেখা যায়নি মানুষের দীর্ঘ সারি। টিকা কেন্দ্র ‘ডক্টরস ডরমিটরি’র সামনের চত্বরের অস্থায়ী শামিয়ানার নিচে বসার ব্যবস্থাও করা হয় তিনটি ভাগে। যার এক ভাগে প্রবাসী, একটি ভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা মানুষ এবং আরেকটি ভাগে নতুন করে টিকা নিতে আসা মানুষকে তথ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী বসানো হয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সিরিয়াল অনুযায়ী টিকা গ্রহণের জন্য মূল কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়। অস্থায়ী শামিয়ানার ভেতরে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় অতিরিক্ত গরম সত্ত্বেও দ্রুত এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টিকা গ্রহণ করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন অনেকে।

ধানমন্ডি থেকে টিকা নিতে আসা জাহানারা ইসলাম বলেন, আমার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে টিকা দিতে এসেছি। প্রথমবার টিকা দিতে আসার সময় সিরিয়ালে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন বসার জায়গা হওয়াতে কিছুটা কষ্ট কম হয়েছে। গতবারের তুলনায় দ্রুত টিকা দিতে পেরেছি এবার।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরিফুল ইসলাম বলেন, যদিও কিছুটা দেরি হয়েছে কিন্তু টিকা পেয়ে খুশি হয়েছি। প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বারের টিকা গ্রহণ দ্রুত এবং সহজ হয়েছে।

বিএসএমএমইউয়ের টিকা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাকেন্দ্রে আসা মানুষকে টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আগে টিকাকেন্দ্রের বাইরে যে দীর্ঘ লাইন এবং ভিড় হতো, এখন তেমনটি নেই। আমরা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেটি কমিয়ে এনেছি।

তিনি আরও বলেন, আগে অনেকেই এসএমএস না পেলেও টিকা কেন্দ্র এসে ভিড় করতেন। এ চিত্র এখন পরিবর্তন হয়েছে। যারা এসএমএস পাচ্ছেন, তারাই শুধু টিকা কেন্দ্রে আসছেন এবং সহজেই টিকা নিতে পারছেন।

আরএইচটি/এসএসএইচ