জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই আগে জামায়াতে ইসলাম-ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, ইসলামকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকেও জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। হলি আর্টিজান হামলার পেছনেও জঙ্গিদের একটা উদ্দেশ্য ছিল।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

'সহিংসতা ও চরমপন্থা প্রতিরোধে ইসলামিক বিজ্ঞজনদের ভূমিকা' শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সিটিটিসি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় এখন যারা ধরা পড়ছে অতীতে কোনো না কোনো সময়, তাদের অনেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা ছাত্রশিবির, খেলাফত কিংবা জামায়াতে ইসলামী করতেন। জেএমবির একসময়ের আমির মাওলানা সাইদুর রহমান, যিনি জামায়াতের মজলিশের শুরা সদস্য ছিলেন দীর্ঘদিন। তিনি হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির ছিলেন।
সারা বিশ্ব জঙ্গিবাদের সমস্যায় ভুগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে, ধর্মকে ব্যবহার করে কিছু সংখ্যক লোক, সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে, সারা বিশ্বের মুসলমানদের ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণ সারা বিশ্ব মুসলমানদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উস্কানি দিয়ে কিছু পথভ্রষ্ট মুসলমান, এক একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর সবাই মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে, এখন সেখানে মুসলিম বিরোধী আইন তৈরির একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে।

ইসলামকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকেও জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে কাউন্টার টেরোরিজম প্রধান বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পেছনেও জঙ্গিদের একটা উদ্দেশ্য ছিল। তারা ভেবেছিল এ হলি আর্টিজানে ঘটনা ঘটলে সরকার দিশেহারা হয়ে যাবে। যাদের দাঁড়ি-টুপি রয়েছে অর্থাৎ আলেম-ওলামা তাদের ওপরে নির্যাতন শুরু করবে। তখন আলেম-ওলামারা সরকারের বিপক্ষে চলে যাবে তখন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হবে।

কিন্তু সরকার সেই ভুল করেনি, বরং সরকার আপনাদের অনুরোধ করেছে যে জঙ্গিবাদ দমনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালনে আপনাদের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েই জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যে লোকটির ইসলামের শিক্ষা রয়েছে, ইসলামী শিক্ষা যার ভেতরে রয়েছে সে কখনোই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না। আমরা দেখেছি যারা জঙ্গিবাদের জড়িয়েছে তাদের ভাসা-ভাসা জ্ঞান। সেটাকে পুঁজি করেই একদল লোক তাদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করেছে।

এদিক থেকে আমরা দেখেছি আলেম-ওলামাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে যা তারা অতীতের মতো পালন করবেন বলে আমরা আশা করি। তাহলেই জঙ্গিবাদের শেকড় উৎপাটন করা সহজ হবে। আমরা জানি একটা হলি আর্টিজান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছিল, যদিও আমরা সেটা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছি।

আলেম-ওলামাদের প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, বাংলাদেশের আল-কায়েদার অস্তিত্ব নাই। আল-কায়েদার কোন শাখা নাই। আর যদি থাকে তাহলে তার প্রমাণ দিন। তা যাচাই-বাছাই করে আমরা ব্যবস্থা নিব। কেউ বলছে দেশে আইএস আছে, আল-কায়েদা আছে, জঙ্গি আছে। বড় ধরনের হামলা হতে পারে। কিন্তু এরকম ভয়ের কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ জঙ্গী কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এসবের কোনো অস্তিত্বই বাংলাদেশে নেই।

গ্লোবাল ইন্ডেক্স রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশের অবস্থান ইউরোপ-আমেরিকার থেকে অনেক আগানো। অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ঝুঁকি অনেক কম। সাউথ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে ভুটানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। আমি মনে করি বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে জঙ্গিমুক্ত, অধিক নিরাপদ। বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে বিশ্বের রোল রোল মডেল। 

জঙ্গি ও উগ্রবাদী দমনে আপনাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে আপনারা সঠিক দায়িত্ব পালন করলে জঙ্গী দূর করা সম্ভব— যোগ করেন মনিরুল।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ আনিস মাহমুদ প্রমুখ।

জেইউ/এসএম