বরিশাল সদর উপজেলার দরগাবাড়ি মনসুর মল্লিক এতিমখানায় দুদকের অভিযান

কাগজে-কলমে আছে ৩০ এতিম শিশু। বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব নেই। উল্টো সরকারি নিয়ম অনুসরণ করতে অনেক শিশুর পিতাকে মৃত দেখানো হয়েছে। যার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এতিমখানার ব্যবস্থাপনা কমিটি! 

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বরিশাল সদর উপজেলার দরগাবাড়ি মনসুর মল্লিক এতিমখানায় অভিযান চালিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। 

এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আদনান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযানকালে দুদক টিম সরেজমিনে মাদরাসা পরিদর্শন করে এতিমদের তালিকা সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত মোহতামিমের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। সত্যতা উদঘাটনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় হতে এতিমদের অনুমোদিত তালিকাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও রেকর্ডপত্র বিস্তারিত পর্যালোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদক টিম।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বরিশাল জেলার সদর উপজেলার দরগাবাড়ি মনসুর মল্লিক এতিমখানার মোহতামিম হাফেজ মাওলানা ইসমাইল হোসেন ও সেক্রেটারি আ. হান্নান মল্লিকের বিরুদ্ধে এতিম শিশুদের ভুয়া তালিকা দিয়ে সরকারি লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এতিমখানার একটি তালিকাও জমা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় ৩০ এতিম শিশুর নাম রয়েছে। সেখানে ১৯ এতিম শিশুর নামে ক্যাপিটেশন ফান্ড থেকে মাথাপিছু দুই হাজার টাকা করে প্রতি মাসে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ৩৮ হাজার টাকা হারে বছরে চার লাখ ৫৬ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মনসুর মল্লিক এতিমখানার রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করছেন দুদক টিমের সদস্যরা

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সেখানে মাত্র পাঁচজন প্রকৃত এতিম রয়েছে। বাকি ২৫ শিশুর কোনো খোঁজ নেই। এজন্য সরকারি নিয়ম রাখতে ৩০ এতিম শিশুর পিতার নাম মৃত লেখা হয়েছে। এতিমখানার মোহতামিম মাওলানা ইসমাইল হোসাইন তিন বছর ধরে ওই টাকা আত্মসাৎ করে বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছেন। 

দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে আসা এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশের সাতটি দফতরে ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠায় দুদক। 
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের ভ্যাটের চালান গ্রহণবাবদ ঘুষ আদায়; মোবারক হোসেন মুক্তি নামীয় স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল; আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাসপোর্ট সেবা প্রদানে ঘুষ দাবি; আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দালালদের সঙ্গে যোগসাজশে গ্রাহকের পাসপোর্ট সেবা প্রদানে ঘুষ দাবি; মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ; ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দুঃস্থ মহিলাদের জন্য বরাদ্দকৃত সেলাই মেশিন বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বিরুদ্ধে  সরকারি বিলের টাকা আত্মসাৎ।

আরএম/এমএআর/