কনস্টেবল নিয়োগের পর নতুন নীতিমালায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তবে কবে বা কী পরিমাণ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তিন দিনব্যাপী অপরাধ পর্যালোচনা সভার (ক্রাইম কনফারেন্স) শেষ দিনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এসব তথ্য জানান তিনি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

পুলিশে নিয়োগের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‌‘নতুন নীতিমালায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ করা হচ্ছে। কনস্টেবল নিয়োগ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আমরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ ও উন্নত অনেক দেশের নিয়োগ নীতিমালা পর্যালোচনা করে পুলিশের উপযোগী কনস্টেবল নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এর ফলে আমরা কনস্টেবল পদে মেধা ও শারীরিক দিক থেকে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন পুলিশ সদস্য নিয়োগে সক্ষম হবো। অচিরেই পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদেও নতুন নীতিমালা অনুযায়ী লোক নিয়োগ করা হবে।’ 

সম্প্রতি তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এবার নতুন নিয়মে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাত ধাপে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কোনো ধাপে অকৃতকার্য হলে ওই প্রার্থী আর কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না।

যা থাকছে নতুন নিয়মে

নতুন নিয়মের পরীক্ষার ধাপগুলো হচ্ছে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল অ্যান্ডুরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভূক্তকরণ।

আবেদনের পর আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস করা হবে। এসএমএসে নিয়োগ সংক্রান্ত ওয়েব পোর্টালে লগইন করার জন্য ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। সেই পোর্টালে লগইন করে আবেদনকারীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে হবে।

সেই প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে নিয়োগ পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে অংশগ্রহণ করতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর দিন প্রার্থীদের পুলিশের নির্ধারিত স্কেলে বুকের মাপ ও ওজন-উচ্চতা নেওয়া হবে। এরপর প্রার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে তাকে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ‘যোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে তার ফরমে একটি সিল দেওয়া হবে।

পরবর্তী ধাপে অনুষ্ঠিত হবে শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা। এই পরীক্ষার আগে প্রার্থীকে ‘ইনডেমনিটির ঘোষণাপত্র’ নামে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমে ওই প্রার্থী ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ’ আছে বলে ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করবেন।

শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ধাপে ধাপে সাতটি ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প, হাই জাম্প, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইমিং। এই ধাপের কোনো একটিতে অকৃতকার্য হলে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না এবং সেখানেই তার পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।

শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের ষষ্ঠ ধাপে রয়েছে ড্র্যাগিং পরীক্ষা। এই ধাপে পুরুষ প্রার্থীদের ১৫০ পাউন্ডের টায়ারকে টেনে ৩০ ফুট দূরত্ব ও নারী প্রার্থীদের ১১০ পাউন্ড ওজনের টায়ার ২০ ফুট দূরত্বে আনতে হবে। এছাড়াও রোপ ক্লাইমিং পরীক্ষায় পুরুষদের ১২ ফিট এবং নারীদের ৮ ফিট দড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে।

শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সব ডকুমেন্ট নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে ৪৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৫ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এরপর লিখিত, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার পর উত্তীর্ণদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এআর/ওএফ