মোছা. হাসিনা

ধর্মীয় লেবাসে প্রতারণার শীর্ষে মাল্টিপারপাস এহসান এস বাংলাদেশের প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন মুক্তিযোদ্ধাকন্যা মোছা. হাসিনা (৪০)। 

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান গালিব আহসান আটক হওয়ার পর তথ্য মিলেছে, মাদারীপুরের কালকিনীর বাসিন্দা মোছা.  হাসিনা ২০১১ সালের ১১ মে সাত লাখ ৭৫ হাজার এবং একই বছরের জুনের ৮ তারিখে ২৫ হাজারসহ সর্বমোট আট লাখ টাকা ধার-দেনা করে বিনিয়োগ করেছিলেন। 

শুরুতে কিছু টাকা লভ্যাংশ দিলেও ২০১৪ সালে কোম্পানিটি উধাও হলে ভুক্তভোগী হাসিনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পাওনাদারের নানা চাপে, টাকার শোকে ও ৯ বছর বয়সের একমাত্র ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় এখন তিনি শয্যাশায়ী। এছাড়া বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। দিনের পর দিন আহাজারি করে চলেছেন ওই টাকা ফেরত পাওয়ার আশায়। সব মিলিয়ে চোখের জলে সময় কাটছে তার। 

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমার বাবা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন আজকের এই দিন দেখার জন্য।

তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গালিব আহসান আটক হওয়ার খবরে আশার আলো দেখছেন। স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধীর শাস্তি ও প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা নেবেন।

পিরোজপুর সদরের খলিশাখালী এলাকার আব্দুর রব খানের বড় ছেলে মুফতি রাগীব আহসান ২০১০ সালে এহ্সান রিয়েল এস্টেট নামে একটি এমএলএম কোম্পানি শুরু করেন। পরে এটি এহ্সান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ নামে পরিচিতি পায়। এর অধীনে রাগীব গড়ে তোলেন ১৭টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহ্সান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লি., এহ্সান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর এ মদিনা ইন্টা. ক্যাডেট একাডেমী, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহ্সান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি., মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহ্সান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহ্সান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহ্সান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহ্সান পিরোজপুর গবেষণাগার ও এহ্সান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে। রাগীব মক্কার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম এবং পিরোজপুর, বাগেরহাট, ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক ও হিফজখানার ছাত্রদের এনে বড় বড় ইসলামী সভা করতেন। সেখানে ইমামরা বলতেন, এহ্সান গ্রুপ শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয়। এখানে টাকা রাখলে অধিক লাভসহ তা ফেরত পাওয়া যাবে। প্রতারিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এ সময় রাগীব কোরআন ও নবীর সুন্নাহর দোহাই দিয়ে মানুষদের আকৃষ্ট করতেন। আলেম-উলামা ও মাদরাসার শিক্ষকদের ব্যবহার করার কারণে এহ্সান গ্রুপে প্রায় এক লাখ মানুষ গ্রাহক হয়। তবে এই ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে বেশির ভাগ গ্রাহক। তাদের মধ্যে আছে অবসরপ্রাপ্ত বহু স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক, সেনা ও পুলিশ সদস্য আর সাধারণ মানুষ। অধিক লাভের আশায় পৈতৃক ভিটা বিক্রি করেও বহু সাধারণ মানুষ হারিয়েছে সর্বস্ব।

ওএফ