আমার বয়স ৮৪ বছর হয়ে গেছে। আর কয়দিন বাঁচবো জানি না। আমি আমার ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিদের ওসিয়ত করে যাচ্ছি, আমার মৃত্যুর পরও যেন আমার দান অক্ষত থাকে, তা মাদরাসা ও এতিমখানা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। আমার আশঙ্কা, আমি মারা গেলে আমার মেজ ছেলে ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন আমার পরকালের সম্বল মাদরাসা-এতিমখানা হতে দেবে না, ঠিক যেভাবে তার পিতার ওসিয়ত করা হেফজখানা সে বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমি মিডিয়া ও প্রশাসনের উদ্দেশে বলবো, আমার এ ওসিয়ত বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের কাছে এ সহায়তা প্রত্যাশা করেন কমরের নেহার নামে এক নারী। তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার মেয়ে ফাতেমা আক্তার। তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বোরকা পরিহিত সবাই কাঞ্চনের পরিবারের সদস্য কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে আলোচিত ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন বলেন, সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া, মামলা দিয়ে অর্থ আদায়, প্রলোভন দেখিয়ে সম্পত্তি দখলসহ নানা উদ্দেশ্যে তার নামে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা করেছে একটি মহল। মামলাগুলো সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক। ভাড়াটে বাদি, আসামি চেনে না বাদীকে, বাদী চেনে না আসামিকে এমন একটা অবস্থা। মাসে ১৫ দিন বিভিন্ন মামলার হাজিরা দিতে হয় জেলায় জেলায়। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, হয়রানিমূলক এসব মামলা থেকে মুক্তি চাই।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়ান আলোচিত ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন 

কমরের নেহারের পক্ষে পাঠ করা বক্তব্যে বলা হয়,‘আমার স্বামী জীবিত থাকতে আমার জন্য আলাদা কিছু সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন।  মূলত, এই জমি সেই জমি, যা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা। ২০০৯ সাল থেকে এ জমি নিয়েই আমার মেজ ছেলে কাঞ্চনের সাথে আমার প্রথম বিরোধ শুরু হয়। কারণ স্বামীর অনুকরণে আমিও চেয়েছিলাম, পরকালের সম্পদ হিসেবে কিছু ধর্মীয় কাজ করে যাওয়ার জন্য। সে ইচ্ছা থেকেই আমার নিজের জমি থেকে কিছু জমি মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করার নিয়ত করি। কিন্তু আমার এ দানের বিষয়টি অন্য সন্তানরা মেনে নিলেও প্রথম থেকেই দ্বিতীয় ছেলে একরামুল আহসান কাঞ্চন মানতে পারেননি। তার কাছে আমার পরকালের সম্পদ থেকে তার ইহকালের সম্পদের ভাগ বড় হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ কাঞ্চন ওয়ারিশসূত্রেই পর্যাপ্ত জমিজমা লাভ করেছে। আমি যে জমিটুকু দানের নিয়ত করেছি, এটা তো আমার পরকালের সম্পদ, সেটা কেন তাকে দিয়ে দিতে হবে? আমি আমার সকল সন্তানকেই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়েছি। সবাই বিষয়টি সহজভাবে বুঝলেও স্ত্রীর প্ররোচনায় কাঞ্চন শুরু থেকেই আমার কথা মানতে চায়নি। সে সময়ে-অসময়ে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যেন, আমি আমার সম্পত্তি পুরোটাই তাকে লিখে দেই, কোনোভাবেই যেন মাদরাসায় দান না করি।

বক্তব্যে আরও বলা হয়,আমি কাঞ্চনের কথা মেনে না নেওয়ায়, সে অন্য এক মহিলাকে মা বানিয়ে আমার জমির জাল দলিল তৈরি করে। আসলে আমার স্বামীর সম্পত্তির সব দলিলপত্র সব সময় আমার মেজ ছেলে কাঞ্চনের কাছেই জমা থাকতো। তাকে আমরা পরিবারের সবাই খুব বিশ্বাস করতাম। কিন্তু অন্য নারীকে মা বানিয়ে জাল দলিল তৈরির পর সবাই নড়েচড়ে বসে এবং খুঁজতে থাকে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে সে আর কি নড়চড় করেছে। তখন কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। দেখা যায় প্রায় ১ যুগ আগেই সে আমাকে মৃত দেখিয়ে এবং তার একমাত্র বোন ফাতেমা আক্তারকে বাদ দিয়ে ওয়ারিশনামা তৈরি করেছে। কাঞ্চনের বানানো জাল দলিল বাতিল করতে এবং আমার মেয়ের ওয়ারিশসত্ত্ব ফিরিয়ে আনতে আমি আদালতের দ্বারস্থ হই। এতে কাঞ্চন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা শুরু করে। আমি গর্ভধারিনী মা হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে ২টি, তার আপন বড় ভাই আক্তারী কামালের বিরুদ্ধে ৭টি, তার একমাত্র বোনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং তার মামাতো ভাই শাকেরুল কবিরের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করে। একইসঙ্গে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যেন তার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে আমার দানের জমি গ্রহণ না করে সেজন্য রাজারবাগ দরবার শরীফ ও মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসার সংশ্লিষ্ট লোকজনের ওপর মামলা-হামলা করতে থাকে। রাস্তাঘাটে যেখানে সে রাজারবাগ দরবার শরীফ বা মাদরাসায় আগত লোকজন পেতো, সেখানেই তাদের ওপর হামলা ও মারধর চালাতো।  অনেককে সে রক্তাক্ত করে হাসপাতালে পাঠায়। মাদ্রাসায় যাওয়া বোরকা পরিহিতা নারীদের সে উত্ত্যক্ত করতো।

তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে আমি সাব-রেজিস্টারের সামনে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে স্বাক্ষর করে মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসায় সর্বমোট প্রায় ৭৬ শতাংশ জমি দান করি। ২০১৪ সালে মাদরাসায় জমি দান করা হয়ে গেলে কাঞ্চন তা বাতিল করতে উঠে পড়ে লাগে। এজন্য সে মিডিয়ায় আমার সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার শুরু করে। প্রথম অবস্থায় সে বলে বেড়ায়, আমাকে নাকি গুম করে আমার থেকে সম্পদ লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই আমার দান বিশুদ্ধ হয়নি। সম্প্রতি কাঞ্চন নতুন করে প্রচার শুরু করছে, পীর সাহেব নাকি আমাকে বাইয়াত করে ভুলভাল বুঝিয়ে আমার সব সম্পত্তি লিখে নিচ্ছেন। আমি নাকি তাদের পৈর্তৃক সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত করে পীর সাহেবকে সব সম্পত্তি লিখে দিচ্ছি। অথচ আমি দরবার শরীফে নতুন বাইয়াত হয়নি। আমি ২৮ বছর ধরে দরবার শরীফের বাইয়াত। আমাকে নতুন করে বাইয়াত করে ভুল বোঝানোর কিছু নেই এবং আমি কোনো সম্পত্তি পীর সাহেবকে লিখেও দেইনি। যতটুকু সম্পত্তি আমি দান করেছি সেটা মাদরাসা ও এতিমখানার নামে, পীর সাহেব বা দরবার শরীফের নামে নয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কমরের নেহারের বড় ছেলে আক্তারী কামাল, অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ছোট ছেলে কামরুল আহসান বাদল, ভাগিনা শাকেরুল কবির প্রমুখ।

এমএইচএন/এনএফ