ছিলেন ব্যবসায়ী। দেড় বছর আগেও তার ভালো আয় ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন শওকত আলম সোহেল। এ অবস্থায় জীবন-জীবিকার তাগিদে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামেন। দেড় বছর ধরে রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন তিনি।

জীবন নির্বাহের এ পথটিও নির্বিঘ্ন ছিল না। যে কারণে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আজ জীবন-জীবিকার একমাত্র বাহনটিতে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেন শওকত। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।

বাড্ডা থানা সূত্রে জানা যায়, ওই মোটরসাইকেল চালকের ঢাকার কেরানীগঞ্জে স্যানিটারি পণ্যের একটি দোকান ছিল। করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে তার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। একটি মোটরসাইকেল কিনে তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করছিলেন। তবে এ পেশায় বিরক্তও ছিলেন তিনি।

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চান শওকতের কাছে। তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেই মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার মোটরসাইকেলটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবন যাপন করলেও বিষয়টি নিয়ে তিনি মনে মনে বিরক্ত ছিলেন। এছাড়া এর আগেও রাজধানীর পল্টনসহ একাধিক জায়গায় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার কারণে তার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ। ফলে আজ আবার কাগজপত্র চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এ কাজ করেছেন। 

পরিদর্শক আবু সাইদ বলেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে শওকত জানান, নিজের মনের ক্ষোভ থেকেই তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বা অন্য কারো দোষ নেই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে মোটরসাইকেলের চালক শওকত আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড্ডা লিংক রোডে এসে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন শওকত আলী। অফিস সময়ে রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যান। এসময় মামলা না দিয়ে কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানান শওকত। কিন্তু সার্জেন্ট ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। অনেক্ষণ ধরে কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন শওকত।

এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘বাড্ডা থানা এলাকায় মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ঠিক আছে কি না চেক করতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট এক ব্যক্তিকে থামাযন। তখন ওই মোটরসাইকেল চালক কাগজপত্র না দিয়ে এক ধরনের ক্ষিপ্ত আচরণ করেন। পরে তিনি নিজেই নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রাথমিকভাবে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় কর্তব্যরত সার্জেন্টের কোনো দোষ আছে কি না সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

এ বিষয়ে পুলিশের কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় আছে কি না- জানতে চাইলে মো. ফারুক হোসেন বলেন, আসলে তিনি নিজেই নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এখন যদি তার মানসিক অবস্থা বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না আমরা খতিয়ে দেখছি।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানে আগে থেকেই ট্রাফিক সদস্যদের বলা ছিল সকাল বেলা যেন কোনো মোটরসাইকেল না দাঁড়ায়। ঘটনাস্থলে রাইড শেয়ারিংয়ের একটি মোটরসাইকেল দাঁড়ালে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা চালকের কাছে কাগজপত্র দেখতে চান। কিন্তু ওই চালক কাগজপত্র না দেখিয়ে উল্টো রেগে গিয়ে নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন।’

এমএসি/এআর/এসএসএইচ/এসএম/জেএস