মোবাইলে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম। নগদের অভিযোগ, একের পর এক রিফান্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম এভাবে তাদের টাকা বেহাত করেছে।

এ বিষয়ে নগদের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানার (২২) বিরুদ্ধে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করেছে। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন এবং আসামি পলাতক রয়েছে বলে থানা পুলিশ জানিয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম থেকে বিভিন্ন নগদ অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একের পর এক ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি জানার পর নগদের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জে নগদের কয়েক হাজার অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পণ্য সরবরাহ হয়েছে এমন ক্রয়াদেশের বিপরীতেও ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ টাকা যে কয়েকটি অ্যাকাউন্টে গেছে, সেগুলো সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানা এবং তার স্বজনদের। 

নগদ যেভাবে বুঝেছে তাদের টাকা বেহাত হয়েছে
সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের অ্যাকাউন্টগুলো রিফান্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা চলে যাওয়ার পর তার নগদের ডিজিটাল সিস্টেমে অস্বাভাবিক লেনদেন হিসেবে ধরা পড়ে। ডিজিটাল সিস্টেমে দেখা যায়, গ্রাহকদের পণ্য অর্ডার করার বিপরীতে এ রিফান্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল নগদ। তবে অর্ডারের তুলনায় রিফান্ডের রিকোয়েস্ট ছিল অনেক বেশি। এসব রিকোয়েস্ট টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দুই দিন পর্যন্ত এসেছে। এছাড়া ৩০ ও ৩১ আগস্ট রাতেও এই প্রক্রিয়া চলমান ছিল।

নগদ সূত্রে জানা যায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের বিক্রিত পণ্যের দাম বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। সেই অনুযায়ী গত ১৪ মার্চ তারা নগদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী নগদ প্রতিষ্ঠানটির পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছিল। টাকা বেহাত হওয়ার পর নগদের পক্ষ থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করা হয়।

এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। নগদের অভিযোগগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে মামলার প্রধান আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা আমরা করছি। 

এ বিষয়ে নগদ যা বলছে

এ বিষয়ে নগদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী পেমেন্ট প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো দায়িত্ব থাকে না নগদের। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কাকে পণ্য দিচ্ছে বা বিক্রি করছে সেটা আমাদের বিষয় নয়। 

অভিযোগের বিষয়ে নগদের হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে বিশেষ করে ৩১ তারিখে হঠাৎ দেখতে পেলাম সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমে অস্বাভাবিক পেমেন্ট হচ্ছে। তখন নগদের মাধ্যমে  সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের পেমেন্ট প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম কোনো গ্রাহকে পণ্যও পাঠিয়েছে আবার রিফান্ডও পাঠিয়েছে। আবার কোনো জায়গায় একই অঙ্কের রিফান্ড অনেকবার যাচ্ছে। বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাই। শপটি ইচ্ছে করে এ কাজ করেছে। 

তিনি আরও বলেন, পরে এ বিষয়ে বনানী থানায় সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানার (২২) বিরুদ্ধে আমরা একটি মামলা করেছি। অন্যদিকে এ ঘটনার পর জুয়েল রানা গত সেপ্টেম্বরের আমাদের অফিসে এসে একটি লিখিত অঙ্গীকার নামা দিয়ে গেছেন। লিখিত অঙ্গীকার নামায় তিনি বলেছেন, তাদের সিস্টেম হ্যাক করে কাজটা কেউ করেছে। এছাড়া উনি নগদের যে টাকার ক্ষতি হয়েছে সেটার চেকও দিয়ে গেছেন। পরে আমরা সেই চেক জমা দিয়ে দেখি তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। তাই আমাদের টাকাটা ফিরে পাওয়ার জন্য মামলা করি। আমাদের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ শপ ডট কমে যারা পেমেন্ট করেছেন তাদের একটি পয়সারও ক্ষতি হয়নি। তাদের টাকা নগদ ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা আটটি নাম্বারকে চিহ্নিত করতে পেরেছি, যারা মানুষের টাকা ক্যাশ আউট করে নিয়ে গেছে। তবে এর বাইরেও আরও একাউন্ট থাকতে পারে।

এমএসি/এসএম