প্রতীকী ছবি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে কথিত এক ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার ফলে ২৫ দিনের এক শিশুর পা কেটে ফেলার খবর পাওয়া গেছে। জন্মের কয়েকদিন পর ওই শিশু বেশি কান্নাকাটি করলে স্থানীয় ওই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন মা-বাবা। পরে শিশুর পায়ে পরপর দুটি ইনজেকশন দেন ওই চিকিৎসক। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। 

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহ্পুর এলাকার কলাকান্দি গ্রামের আবুল বাশার ও সীমা বেগম দম্পতির ঘরে গত ৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় প্রথম সন্তান অনিক। জন্মের ছয় দিন পর বেশি কান্নাকাটি করায় স্থানীয় কথিত চিকিৎসক দেব কিশোর সরকারের কাছে নিয়ে যান সীমা বেগম। এ সময় ওই চিকিৎসক ঝাড়-ফুক ও ওষুধের সঙ্গে শিশুটির পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এতে কান্না না থেমে উল্টো বেড়ে যায়। পরদিন শিশু অনিকের পায়ে আরও একটি ইন‌জেকশন দেন। ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়ায় শিশুর ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কালো হয়ে যায়। শিশুর এমন অবস্থা দেখে ওই চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর কোনো ভালো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। 

শিশুর মা বলেন, ‘তার দেওয়া ইনজেকশনে এমন হয়েছে দাবি করলে কথিত চিকিৎসক দেব সরকার ক্ষেপে যান। পরে চাপের মুখে তিনি শিশুর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের কথা জানান।’ 

শিশু অনিকের বাবা আবুল বাসার জানান, স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ দিলে কথিত ডাক্তারের সহায়তায় আট দিন বয়সী শিশুটিকে প্রথমে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক শিশুকে ভর্তি না করলে শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে দুদিন রাখার পরে অবস্থার অবনতি হলে ধানমন্ডির মাদার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষার পর জানতে পারেন শিশু অনিকের পায়ে পচন ধরেছে। দ্রুত পা কেটে না ফেললে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অনিকের ডান পায়ে অপারেশন করে হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়। 

স্থানীয় মো. খবির জানান, আবদুল্লাহ্পুর বাজারে একটি দোকান নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও কিছু ওষুধ নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করেন দেব কিশোর সরকার। এলাকায় তাকে অনেকে চিকিৎসক নামে চেনে। সেই সুবাদে স্বর্ণা ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকানও চালান।

এ বিষয়ে কথিত ডাক্তার দেব কিশোর সরকার বলেন, ‘আমি কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর বাজার ও শুভাঢ্যা এলাকায় দুটি চেম্বার নিয়ে ৩০ বছর ধরে ডাক্তারি করছি। আমার কাছে ওই শিশুটিকে নিয়ে এলে কান্না থামানোর জন্য দুদিন দুটি ইনজেকশন দিয়েছি। অবশ্য সে ইনজেকশনে তেমন সমস্যা হয়নি। শিশুর পা একটু কালো হয়েছিল। ডাক্তার হিসেবে আমার পরিচিতি আছে।’

তার ডাক্তারি সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে মেট্রিক পাস করে এমএলএম কোর্স করি। পরে ডাক্তারি সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছি। আমার বাবারও কবিরাজ হিসেবে পরিচিতি আছে। শিশুটির চিকিৎসার জন্য আমি টাকা-পয়সা দিয়ে সহায়তা করছি।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘শিশুটিকে আমাদের কাছে নিয়ে এলে আমরা সহায়তা করব। এছাড়া ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির বলেন, ‘শিশু অনিকের পা হারানোর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যদি ওই শিশুর পরিবার কোনো আইনি সহায়তা চান, পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য করা হবে।’ 

এ ঘটনায় শিশু অনিকের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

এইচকে