সংকট নিরসনে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের দাবি
নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিদ্যমান সংকট নিরসনে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের দাবি উঠেছে অদলীয় রাজনৈতিক সামাজিক মঞ্চের আলোচনা সভায়।
শুক্রবার রাজধানীর পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজিত ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে পূর্ণাঙ্গ আইনের প্রয়োজনীয়তা ও রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি তোলেন বক্তারা।
লিখিত বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদের একটি ভূমিকা থাকতে হবে। আইনে নির্বাচন কমিশনে সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি সুস্পষ্ট করতে হবে, যাতে সঠিক ব্যক্তিরা নিয়োগ পান। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন লিখিত বক্তব্যে উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারত ছাড়া নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানে সংবিধানের আলোকে প্রণীত আইনের প্রতিষ্ঠিত কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এ অঞ্চলের ছোট কিন্তু ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক দেশ ভুটানেও সব সাংবিধানিক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানের আওতাধীন আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বিজ্ঞাপন
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও অঙ্কুর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংসদের দুটি কক্ষ থাকবে। উচ্চকক্ষ নির্বাচনকালে সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। সেটিই কার্যকর থাকবে স্থায়ীভাবে, এটি একটি চমৎকার প্রস্তাব। এটা ভাবা যেতে পারে। উচ্চকক্ষের কথা আগে থেকেই বলা হচ্ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরু বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ থাকলে আজ বাংলাদেশে অনেক প্রশ্ন উঠতো না। আমরা চাই বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার সমাধান হোক। দেশে যারা নীতি প্রণয়ন করেন, তারা নীতি সঞ্চালন করেন না। নীতি প্রণয়ন ও সঞ্চালনকারীদের সমন্বয় করার জন্য জাতীয় সংসদের দুটি কক্ষ দরকার।
বিজ্ঞাপন
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মঞ্চের সদস্য সচিব অয়ন আমান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শুধু শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দল ও অদলীয় রাজনৈতিক সামাজিক শক্তির মধ্যে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শ্রম-কর্ম-পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা আবশ্যিক। সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধানের মাধ্যমে এ সমস্যার স্থায়ী ও সাংবিধানিক সমাধান সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে রূপরেখা হিসেবে ১৪ দফা প্রস্তাব করা হয়। মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরুর সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আব্দুস সালাম মিয়া, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, সামাজিক শক্তির আহ্বায়ক হাবীবুল্লাহ, অধ্যক্ষ বাকী উল্লাহ, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি এম এ আউয়াল, মঞ্চের অন্যতম মোশাররফ হোসেন, মোশারেফ হোসেন মন্টু, সাকিল সৈকত, রায়হান তানভীর প্রমুখ।
এইউএ/আরএইচ