ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসেন চিকিৎসার জন্য। এদের মধ্যে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাদের কথা চিন্তা করেই ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে অত্যাধুনিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।

আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত টয়লেট ব্যবহার করে খুশি চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা। কুমিল্লা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম আধুনিক এই টয়লেট ব্যবহার করে দারুণ প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, পাঁচ টাকা দিয়ে একটি কার্ড পাঞ্চ করে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। বাইরের দিকে সিসি টিভি ক্যামেরা থাকায় নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করতে হয়নি। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় ব্যবহার করতেও কোনো সমস্যা হয়নি।

বরিশাল থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন পারুল আক্তার নামে এক নারী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নারীদের জন্য এমন সুন্দর ব্যবস্থা দেখে ভাল লেগেছে। নারীরা চাইলেই যেকোনো জায়গায় টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন না। এই টয়লেটের ভেতর সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। কার্ড পাঞ্চ করে অফিসে ঢুকতে দেখছি। এই প্রথম কার্ড পাঞ্চ করে কোনো টয়লেটে ঢুকতে দেখলাম। সেটাও আবার ঢামেক হাসপাতালে।

ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে কয়েক দিন আগে এই আধুনিক টয়লেট চালু হয়েছে। এখানে তিনটি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। দুটি নারী ও শিশুদের জন্য, আর একটি প্রতিবন্ধীদের জন্য। হুইলচেয়ার নিয়ে যাতে প্রতিবন্ধীরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন তার ব্যবস্থাও রয়েছে। পাঁচ টাকা দিয়ে আধুনিক মানের এই টয়লেট ব্যবহার করা যায়। বাইরে দুটি সিসি টিভি ক্যামেরা রয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। 

জানা গেছে, এখানে বিশুদ্ধ পানি, বাচ্চাদের ডায়পার পাল্টানোর জায়গা ও নারীদের স্যানিটারি প্যাড বদলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া বাকি ছয় দিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে ভূমিজ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা।

বহির্বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার মো. আবুল বাশার শিকদার বলেন, বহির্বিভাগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার রোগী আসে। তাদের সঙ্গে আরও ৫-৬ হাজার মানুষ আসেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই থাকেন নারী ও শিশু। তাদের কথ চিন্তা করে শুধু নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিচালক মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এই আধুনিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে অনেক রোগী আসেন। অনেক জটিল রোগী এখানে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য আসেন। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। পুরুষদের টয়লেট থাকলেও নারীদের জন্য কোনো টয়লেট ছিল না। নারীরা চিকিৎসা নিতে এসে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তেন। তাদের সমস্যা সমাধানে সার্জিক্যাল বিভাগের প্রধানের সহযোগিতায় ভূমিজ নামে একটি এনজিও এগিয়ে আসে। পরে সরকারি সংস্থা পিডব্লিইডি ও ভূমিজের সমন্বয়ে আধুনিক এই টয়লেট চালু করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, এটি একটি আধুনিক ব্যবস্থা। নারীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের সঙ্গে মোবাইল ও টাকা-পয়সা থাকে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।

পরিচালক আরও জানান, এখানে কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হয়। ভেতরে কেউ থাকলে কোনোভাবেই আরেকজন ঢুকতে পারবেন না। লক থাকলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই পাঞ্চ কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচ টাকা মিনিমাম চার্জ নেওয়া হয়। আবার যারা গরীব রোগী, তাদের বিনামূল্যে টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এটি একটি আধুনিক মানের টয়লেট।

এসএএ/ওএফ