সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন ও সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বানে গণঅনশন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টা চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা মোড় এলাকায় অবস্থান নেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

গণঅনশন কর্মসূচিতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘দুর্গোৎসব চলাকালে ও এর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এসময় তিনি সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে দেওয়ার দাবি জানান। প্রতি পরিবার থেকে একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ দিতেও সরকারের কাছে দাবি জানান রানা দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। 

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি যারা দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারি দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এবং সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে দেওয়া অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, দাবিগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনায় রেখে প্রয়োজনে এসব দাবির সমর্থনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে- ‘চল চল ঢাকায় চল’ শ্লোগানে ঢাকায় সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার টাঙানোর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিবাদী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন করছি।

এসময় বক্তারা বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে হবে। পূজার সময় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে পারেনি। যারা মন্দিরে হামলা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানান তারা।

কেএম/এসএসএইচ