বিমানের টিকিটের ব্যবসা করতে গিয়ে টোয়েন্টিফোর টিকিটকাণ্ডে (24tkt.com) প্রতারণার শিকার হয়েছেন একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ইনচার্জ সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল। প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করে একদিকে তিনি পুঁজি হারিয়েছেন, আরেকদিকে তাকে গ্রেফতার করে পাঠানো হয়েছে জেলে।

তদন্তে জানা গেছে, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি টোয়েন্টিফোর টিকিটির পরিচালনাকারীরা সোহেলের সঙ্গে প্রতারণা করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার হয়ে সোহেল তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। সেই সোহেলকে আবার অন্য এক মামলায় গ্রেফতার করে সিআইডি। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

সোহেলের স্ত্রী সুমাইয়া সিমা জানান, টোয়েন্টিফোর টিকিটের প্রতারণায় মিজানুর রহমান কোম্পানিটি থেকে কোনো টাকা নেননি। কাগজে-কলমে কোম্পানিটির ডিরেক্টর হলেও কোনোরকম আর্থিক লেনদেন কিংবা কোম্পানি পরিচালনায় মিজানুর রহমান সোহেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। 

কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো গ্রাহকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনও করেননি। কোনো গ্রাহকও তাকে চিনতেন না। কোম্পানি থেকেও তিনি কোনো বেতন-ভাতা কিংবা সম্মানি নেননি। কোম্পানির অ্যাকাউন্ট থেকেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ নেই বলে জানান তার স্ত্রী।

সূত্র জানায়, প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছেন, এটা বুঝতে পেরে মিজানুর রহমান অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠানটিকে উকিল নোটিশ পাঠান। তবে কোনো প্রত্যুত্তর পাননি। গ্রাহক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলার আগেই গত ১৯ মে মিজানুর রহমান কোম্পানির এমডি আবদুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যান মোসা. নাসরিন সুলতানা ও পরিচালক আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় জিডি করেন।

পরবর্তীতে গত ১ জুন সিএমএম আদালতে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ওই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিজানুর রহমান। মামলাটি এখন পিবিআইতে (কল্যাণপুর ব্রাঞ্চে) তদন্তাধীন রয়েছে। মূলত মিজানুর রহমান সোহেলের মামলার পর টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের গ্রাহক ও সিআইডি মামলা করেন।

সোহেলের স্ত্রী সুমাইয়া সিমা আরো জানান, গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে মিজানুর রহমান সোহেল খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক ও তার বোন চেয়ারম্যান মোসা. নাসরিন সুলতানা কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ সময়ে মিজানুর রহমান সব পরিচালককে সিসিতে রেখে অফিসের হিসাব চেয়ে দুই দফায় এমডিকে মেইল করেন। ফোনেও নানান সময়ে অফিসের হিসাব দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যান লাপাত্তা হয়ে যান। ফলে মিজানুর রহমান তার বিনিয়োগ করা পুঁজিও হারিয়েছেন। 

মিজানুর রহমানের করা মামলার বিষয়ে পিবিআইর এক কর্মকর্তা বলেন, পিবিআইয়ে থাকা সোহেলের মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিষয়গুলো তদন্ত কর্মকর্তা খতিয়ে দেখছেন।

নির্দোষ স্বামী সোহেলের মুক্তি দাবি করে সুমাইয়া সিমা বলেন, টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের প্রতারক এমডি ও চেয়ারম্যানের খপ্পরে পড়ে কোম্পানির কোনোরকম আর্থিক লেনদেনে জড়িত না থাকলেও এখন কারাগারে রয়েছেন সোহেল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির তথ্য ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর নগদ অর্থ উত্তোলন করা হতো। এমডি তার ব্যাংক লোন, গাড়ির কিস্তি অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে দিয়েছেন। পরিচালকদের অনুমোদন না থাকলেও এমডি প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে মাসিক সম্মানি নিয়েছেন। নিজের নামে একাধিক ব্যাংক এফডিআরও করেছেন। অফিসের যৌক্তিক কোনো হিসাব এমডি বা অফিস সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই নেই।

এছাড়া এমডি রাজ্জাক পাঁচজনের যৌথ কোম্পানি টোয়েন্টিফোর টিকিটের টাকা তার ব্যক্তিগত কোম্পানি বিডি টুরিস্ট ডিএমসির মাধ্যমে লেনদেন করতেন। অবৈধভাবে নিজের ও বিডি টুরিস্ট ডিএমসির নামে একাধিক ব্যাংক ডিপিএস করেছিলেন। বিডি টুরিস্টের নামে যত লোন ছিল এবং বিডি টুরিস্টের অফিস ও স্টাফ চালানো হতো টোয়েন্টিফোর টিকিটের টাকা দিয়ে। অ্যাভন নামে একটি আইটি ফার্ম করেছিলেন, সেটির টাকাও টোয়েন্টিফোর টিকিট থেকে নিতেন। ইভ্যালিতে তার বড় একটা বিনিয়োগ ছিল, সেই টাকাও টোয়েন্টিফোর টিকিট থেকে নেওয়া। কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য বাইক সার্ভিস দেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।

গত ১১ অক্টোবর রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমানের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনলাইন এজেন্সি টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের পরিচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

টোয়েন্টিফোর টিকিটকাণ্ডে মিজানুর রহমান সোহেলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, তিনি কোম্পানির মালিকদের একজন। যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটি তদন্তাধীন। তার সংশ্লিষ্টতা কতটা, আদৌ আছে কি না, সেটি তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।

এআর/এইচকে