বেক্সিট পরবর্তী রূপরেখা প্রণয়নে ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উচ্চতর পর্যায়ে নিতে চায় বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরে ফ্রান্সের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অফ ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হতে পারে। 

শনিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর স্কটল্যাণ্ড, লন্ডন ও ফ্রান্স সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর শুরু হবে।

জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে (কপ-২৬) যোগ দিতে ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্লাসগোতে অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখবেন তিনি।

ড. মোমেন জানান, আগামী ৯-১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে দ্বিপাক্ষিক সরকারি সফর এবং ইউনেস্কোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। এ সফরকালে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠককালে বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অফ ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সামনের দিনগুলোতে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবগুলো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চাই। প্রত্যেক দেশ বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করছে। আস্থা ও সম্মান দিচ্ছে। এটা এজন্য হচ্ছে যে গত ১২ বছরে আমাদের অর্জন অভাবনীয়। ওদের সবার আমাদের ওপর আস্থা অনেক বেড়েছে। আমরা আমাদের সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করতে চাই। সুসম্পর্ক আরও বাড়াতে চাই। 

ফ্রান্সের সঙ্গে আমরা বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি। ফ্রান্সের সঙ্গে এখনও আমাদের সরাসরি ফ্লাইট নেই। এটা নিয়ে আমরা আলাপ করব। একাধিক ইস্যু আলোচনা হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে স্বেচ্ছায় দাওয়াত দিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ সফরে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি ছাড়াও দেশটির মন্ত্রী ও ফ্রান্সের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি ফ্রান্সের বেশ কিছু কোম্পানির প্রধানরাসহ শীর্ষস্থানীয় ফরাসী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থার (এমইডিইএফ) একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়েছেন।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের প্রস্তাব জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ২১০তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর প্যারিসে ইউনেস্কো সদরদফতরে ‘UNESCO- Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize for the Creative Economy’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি বিজয়ী ব্যক্তি/সংস্থাকে দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দিয়ে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দিতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে।  

একই দিনে প্রাক্তন ফরাসি বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্যাসকেল ল্যামির আমন্ত্রণে প্যারিস পিস ফোরামের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবে বলেও জানান মোমেন। 

মোমেন আরও জানান, আগামী ১২ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অংশগ্রহণের জন্য ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরবেন। পাশাপাশি জাতিসংঘ থেকে নেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বজনীন, মানসম্মত, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এবং সুস্থ-অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্বের বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তা ও অর্জনসমূহ বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্যারিসে অবস্থানকালে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অদ্রে আজুলের সঙ্গে একটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্সের সফরের গুরত্ব তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্যারিসের এনগেজমেন্টটা খুবই গুরত্বপূর্ণ। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীকে তিনটি স্থানে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরত্বপূর্ণ দেশ ফ্রান্স। ইইউর পরিবর্তনের পর ফ্রান্সের সঙ্গে নতুন করে এ সফর। সফরে দেশটির রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া ফ্রান্সের অনেকগুলো কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে বৈঠক আছে। 

তাছাড়া ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর নামে যে পুরস্কার দেবে তা সফরের গুরত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।

ফ্রান্সের সঙ্গে কি ধরনের সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সমঝোতা স্মারক নিয়ে কোনো কথা এখন জানাতে চাই না। এ পর্যায়ে বলতে চাচ্ছি না, এখনও কাজ চলছে। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’

লন্ডনের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন ও প্যারিসে অনুষ্ঠেয় সরকারি সফরে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা ছাড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী ১ ও ২ নভেম্বর গ্লাসগো এবং ৩ থেকে ৮ তারিখ লন্ডন সফর করবেন। 

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে যা থাকছে
আগামী ৩ থেকে ৮ তারিখ লন্ডন সফর করবেন। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এরপর নভেম্বরের ৯ থেকে ১৩ তারিখ প্যারিস সফর করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর লন্ডনের কর্মসূচি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সফরের সময় ওয়েস্ট মিনিস্টার প্যালেসে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বক্তব্য দেবেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়াও তিনি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে গোপন দলিলপত্রের নতুন প্রকাশিত সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এনআই/এসএম