রোববার সন্ধ্যার পর রাজধানীতে বাস চলতে দেখা যায় / ছবি- ঢাকা পোস্ট

৬০ ঘণ্টার অঘোষিত ধর্মঘট শেষে ঘুরল বাসের চাকা। ডিজেলের দাম বাড়ার জেরে ভাড়া বাড়ানোর দাবি সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়ায় সড়কে বাস নামালেন মালিকরা।  

রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস চলতে দেখা যায়। এর আগে বিকেলে বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বৈঠক শেষে বাসভাড়া বাড়ানোর কথা জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

রাজধানীর ঝিগাতলা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সীমিত পরিসরে নগর পরিবহনের বিভিন্ন কোম্পানির বাস চলাচল শুরু করেছে। তবে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের চলাচল তেমনভাবে দেখা যায়নি।

বাস চলাচলের খবর শুনে অনেক যাত্রী বিভিন্ন স্টপেজে ভিড় করেন। দীর্ঘসময় পর বাস চালু হওয়ায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোববার সন্ধ্যার পর থেকে সীমিত পরিসরে বাস চললেও সোমবার থেকে তা পুরোদমে চলবে। 

বাস চলাচলের খবরে অনেক যাত্রীই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন / ছবি- ঢাকা পোস্ট

নিউমার্কেট এলাকায় কথা হয় দোকান কর্মচারী আবু বকরের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেক কষ্ট করে দোকানে এসেছি। যত কষ্টই হোক দোকানে তো আসতেই হবে। গত দুদিন বাস চলেনি, যাতায়াত করতে খুব সমস্যা হয়েছে। আজ বাস চলাচল শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।

রবিউল হাসান নামে আরেক কর্মচারী বলেন, বাস বন্ধ থাকায় দোকানে ক্রেতার সংখ্যা কম। আজ যেহেতু বাস চলাচল শুরু হয়েছে, আশা করা যায় কাল থেকে আবার ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।

আজ থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ

বিআরটিএ-বাস মালিকদের বৈঠকের পর ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। 

ধর্মঘটে যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা ও ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা করা হয়েছে। ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানো হলেও সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসের আগের ভাড়াই কার্যকর রয়েছে।  

আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে একজন যাত্রীর জন্য প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সার স্থলে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নতুন ভাড়ার হার ৮ তারিখ (নভেম্বর) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এর আগের দিন থেকেই বাসে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

চাঁনখারপুল থেকে নিউমার্কেট আসার পর ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে হেলপারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় বিমল সাহা নামের এক যাত্রীকে। তিনি বলেন, সবসময় চাঁনখারপুল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া দিই। হেলপার এখন ১৫ টাকা দাবি করছে। বলছে, এখন থেকেই বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। 

আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে বিকাশ, ভিআইপি ২৭, সেফটিসহ কয়েকটি পরিবহনের সংশ্লিষ্টরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকেই স্ট্যান্ড থেকে বেশকিছু গাড়ি ছাড়া হয়েছে। তবে এখনও ভাড়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। ভাড়ার তালিকা রাতের মধ্যেই হবে এবং আগামীকাল সোমবার থেকে তা বাস্তবায়ন হবে। 

বিআরটিএ ও বাস মালিকদের বৈঠক / ছবি- ঢাকা পোস্ট

পণ্যবাহী ট্রাকের ধর্মঘট অব্যাহত

ভাড়া বাড়ানোর দাবি মেনে নেওয়ার পর থেকে যাত্রীবাহী পরিবহনের অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও পণ্যবাহী ট্রাকের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবি, জ্বালানি তেলের দাম না কমলে ট্রাক চলবে না। 

গত ৩ নভেম্বর রাতে ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে সরকার, যা ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তখন পরিবহন মালিকরা বলেন, এত দামে ডিজেল কিনে বিদ্যমান ভাড়ায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। পরে মালিকরা শুক্রবার সকাল থেকে বাসসহ পণ্যবাহী যান চালানো বন্ধ করে দেন। যদিও তাদের দাবি, ধর্মঘটের বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা ছিল না।

অঘোষিত ওই ধর্মঘটের ফলে সারাদেশে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএর কাছে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। কিন্তু বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিআরটিএ মালিক সমিতিকে বৈঠকের জন্য ডাকে রোববার।

রোববার বিআরটিএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে মালিকপক্ষের দাবি মেনে বাসের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। 
 
আরএইচটি/আরএইচ