ডিজেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন মালিকরা। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

রোববার বিকেলে বাসমালিকরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তাদের চাপের মুখে বিআরটিএ বাসভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়। 

বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধ্যার দিকে সড়কে বাস নামান মালিকরা। 

অনেকে বলছেন, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছেন বাসমালিকরা। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জনভোগান্তির দায় কেউই নিচ্ছেন না। 

রোববারের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বাসভাড়া বাড়ানোর হার সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। 

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, অঘোষিত এ বাস ধর্মঘট কারা দিয়েছিল, কী উদ্দেশ্যে ডেকেছিল। বিআরটিএ চেয়ারম্যান বা মালিক সংগঠনের নেতারা কেউই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে সারাদেশে সৃষ্ট জনভোগান্তির দায় কার। এ প্রশ্নও এড়িয়ে যান তিনি। 

বৃহস্পতিবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর ভাড়া সমন্বয় চেয়ে চিঠি দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। চিঠি পাওয়ার পর দ্রুত কেন বৈঠক আহ্বান করা হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, বাসমালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে এক করতে পারছিলাম না। আজও অনেকে এসেছেন, অনেকে অনুপস্থিত। এর বেশি কথা বলতে চাননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বাস ধর্মঘট আহ্বান করিনি। বাস মালিকরা বলেছিলেন, তারা অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে বাস চালাতে পারবেন না। তাই তারা বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা শুধু তাদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে এক ছিলাম। 

এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কোনো নেতাও পরিবহন ধর্মঘট পরিস্থিতির বিষয়ে দায় নিতে রাজি নন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বক্তব্য, এটি বাসমালিকদের বিষয়। পরিবহন শ্রমিকরা তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সহায়তা করেছেন মাত্র। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। 

গত ৩ নভেম্বর রাতে ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে সরকার, যা ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তখন পরিবহন মালিকরা বলেন, এত দামে ডিজেল কিনে বিদ্যমান ভাড়ায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। 

পরে মালিকরা শুক্রবার সকাল থেকে বাসসহ পণ্যবাহী যান চালানো বন্ধ করে দেন। যদিও মালিক সংগঠনগুলোর দাবি, ধর্মঘটের বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। অঘোষিত ওই ধর্মঘটের ফলে সারাদেশে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএর কাছে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। কিন্তু বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিআরটিএ মালিক সমিতিকে বৈঠকের জন্য ডাকে রোববার।

রোববার বিকেলে বৈঠক শেষে মালিকপক্ষের দাবি মেনে বাসের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

পিএসডি/আরএইচ