ডিজেল ও কোরোসিনের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৬০ ঘণ্টার অঘোষিত ধর্মঘট শেষে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। বর্ধিত ভাড়ায় বাস চলাচলের প্রথম দিন, আজ (সোমবার) সকাল থেকেই নতুন ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।   

নতুন ভাড়া নিয়ে যাত্রীর সঙ্গে চালকের সহকারীর বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন- সব চাপ জনগণের ওপর কেন? কেউ আবার মনে করছেন বাস ভাড়া বাড়িয়ে সরকার অন্যায় করেছে।

নতুন বাস ভাড়ায় খুশি নন এমন মানুষদের একজন কারওয়ান বাজারের ছোট একজন ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। তিনি গুলিস্তান থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আগে বাসে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতেন। আজ থেকে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করায় বাসের চালকের সহকারী ১৫ টাকা ভাড়া চাওয়ায় তিনি দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে হাবিবের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা চলে চালকের সহকারীর। হাবিবের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের কথা হয় বাংলামোটরে। 

তিনি বলেন, প্রথমত বাস ভাড়া বাড়িয়ে সরকার একটা অন্যায় করেছে। ওদের দাবি-দাওয়া আমাদের পকেটের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে। গুলিস্তান থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়া ১৫ টাকা হয় কীভাবে? ১০ টাকা দিয়ে শাহবাগ নেমে এতটুকু রাস্তা হেঁটেই এলাম। 

বাংলামোটরে বাসের জন্য অপেক্ষারত নয়ন নামে আরেকজন বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেড়েছে, সেই অজুহাতে তারা আমাদের তিনদিন জিম্মি করে রাখলো। যেই সরকার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল, তারা রাস্তায় নেমে গেল। কেউই আসলে আমাদের পক্ষের না। সবাই যার যার সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত। যত পারো জনগণের পকেট কাটো! সরকারতো চাইলে ভতুর্কি দিতে পারতো, আর বাসমালিক পক্ষ তেলের দাম কমানো নিয়ে আন্দোলন করতে পারতো।’

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখে মালিকপক্ষ। রোববার বিকেলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বাস মালিকদের সভায় দূরপাল্লার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে। তারপর সন্ধ্যা থেকে ঢাকার টার্মিনালগুলো থেকে বাস ছাড়তে শুরু করে। ওই রাতে নতুন ভাড়ার হার জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোমবার থেকেই নতুন ভাড়া কার্যকর হবে।

আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভাড়া দিতে রাজি না বেশিরভাগ যাত্রী। এ নিয়ে অনেক গণপরিবহনের চালকের সহকারীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান তারা। বিষয়টা নিয়ে সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। তাদের প্রশ্ন সব চাপ জনগণের ওপর কেন?

এদিকে নতুন যে ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে অনেক পরিবহনে তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করতেও দেখা গেছে। দেখা যাচ্ছে- নতুন ভাড়া যেখানে ১৭ টাকা, সেখানে ভাঙতি এড়ানোর জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।  

গাড়ির চালক ও তাদের সহকারীদের ভাষ্য, তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে বাড়তি কোনো টাকা নিচ্ছেন না। 

শিকড় পরিবহনের একটি বাসেন চালক মুকাব্বির বলেন, ‘সকাল থেকে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা লেগেই আছে। যাত্রীরা নতুন ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছে না। এটাতো আমরা করি নাই, সরকার ও বাস মালিক-সমিতি করছে। আমরা চাকরি করি।’

চালকের সহকারী ইদ্রিস জানান, ভাড়া নিয়ে কম-বেশি সবাই তর্কাতর্কি করছে। পারলে অনেকে মারতে আসে। আমার তো কিছু করার নাই।

এনআই/এনএফ