মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধে আটক ও জব্দকৃত বস্তু সংরক্ষণ-নিষ্পত্তি বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য খসড়াও তৈরি করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। নিয়ম অনুযায়ী খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে একাধিকবার মতামত চাওয়া হয়েছে। তবুও সবার মতামত মেলেনি। বর্তমানে খসড়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে আছে।

জানা গেছে, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ এর ধারা ২৫, ২৬, ২৭, ২৮ ও ৬৮ মোতাবেক ‘আটক ও জব্দকৃত বস্তু সংরক্ষণ ও নিষ্পত্তি বিধিমালা-২০২১’ তৈরি করা হচ্ছে। বিধিমালার খসড়া তৈরি করার পর তা সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এরপর সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর খসড়ার বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ১০ অক্টোবরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউই মতামত দেয়নি।

এরপর গত ২৬ অক্টোবর মতামত দেওয়ার জন্য সময় বাড়িয়ে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এবং দেশের সব বিভাগীয় কমিশনারকে এ চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘আটক ও জব্দকৃত বস্তু সংরক্ষণ ও নিষ্পত্তি বিধিমালা-২০২১’ এর খসড়ার ওপর গত ১০ অক্টোবরের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদফতর/কার্যালয় থেকে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি। এগুলো হচ্ছে- (ক) জননিরাপত্তা বিভাগ  (খ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড  (গ) র‍্যাব  (ঘ) পুলিশ হেড-কোয়াটার্স  (ঙ) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ  (চ) বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়- ঢাকা/চট্টগ্রাম/খুলনা/রংপুর/রাজশাহী/সিলেট/বরিশাল/ময়মনসিংহ। এ অবস্থায় খসড়ার ওপর ১০ নভেম্বরের মধ্যে মতামত দেওয়ার জন্য পুনরায় নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেক বিভাগ ও সংস্থা মতামত জমা দেয়নি।

সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর খসড়ার বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ১০ অক্টোবরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউই মতামত দেয়নি।

এ বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব (মাদক-১, ২ শাখা) মুহাম্মদ আবদুর রউফ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কিছু-কিছু মতামত পাওয়া গেছে।’

কতগুলো বাকি আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখছি, কতগুলো বাকি আছে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।‘

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খসড়াটি সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠিয়েছি। তারা মতামত চেয়েছে। পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রুত বিধিমালাটি হয়ে যাক। কিন্তু একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সে জন্য সময় লাগছে।

সংশ্লিষ্টদের মতামত না পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাদের কাছ থেকে মতামত পাইনি সেগুলো না ধরেও কাজ করা যেতে পারে। তাদের মতামত হয়ত নেই। এ বিষয়ে আমরা সুরক্ষা সেবা বিভাগে খোঁজ নেব।

গত ২৬ অক্টোবর মতামত দেওয়ার জন্য সময় বাড়িয়ে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এবং দেশের সব বিভাগীয় কমিশনারকে এ চিঠি পাঠানো হয়।

কবে নাগাদ বিধিমালাটি চূড়ান্ত হতে পারে ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি ডিজি হিসেবে চাই কালকেই বিধিমালাটি হোক। কিন্তু ধাপগুলো তো শেষ করতে হবে।

কী আছে বিধিমালায়?

আটক ও জব্দকৃত বস্তু, আটক ও জব্দকৃত বস্তুর নমুনা গ্রহণ, আটক ও জব্দকৃত বস্তু সংরক্ষণ, আটক ও জব্দকৃত বস্তুর হিসাব সংরক্ষণ, আটক ও জব্দকৃত বস্তুর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা, আটক ও জব্দকৃত বস্তুর নিরাপত্তা বিধান, আলামতখানা বা মালখানা পরিদর্শন, ঘটনাস্থলে আটক বা জব্দকৃত বস্তুর নিষ্পত্তি বিলিবন্দেজ, আটক বা জব্দকৃত বস্তু আদালতে উপস্থাপন করা, বাজেয়াপ্ত করা বস্তুর নিষ্পত্তিকরণ, আটক জব্দ করা বিলিবন্দেজ এবং ফেরত দেওয়ার বিষয়ে খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান এবং এই বিধিমালা ও ম্যানুয়ালের বিধানাবলী এবং ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান ব্যতীত কোনো বস্তু আটক বা জব্দ করা যাবে না। কোনো বস্তু আটক করতে হলে তা অবশ্যই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৫, ২৬ ও ৩০ ধারা, এই বিধিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং এ বস্তু মাদক অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিংবা মাদক অপরাধ প্রমাণে সহায়ক হতে হবে।

এতে বলা হয়, যে কোনো আটকের ঘটনার পর আটক সম্পর্কে উদঘাটনকারী অফিসার তার নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আটক করা বস্তু অবশ্যই ঘটনাস্থল থেকে স্থানান্তর করে উদঘাটনকারী অফিসারের নিয়ন্ত্রণ, দখল ও হেফাজতে নিতে হবে। যে কোনো আটক ঘটনার পরে তা সম্পর্কে উদঘাটনকারী কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার কাছে নির্দিষ্ট ফরমে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

বাজেয়াপ্তযোগ্য অথবা অপরাধ প্রমাণে সহায়ক আটক বা জব্দ করা সকল বস্তুই আটক বা জব্দের পর যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্র সম্পন্ন আদালতকে অবহিত করতে হবে। মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার আগ পর্যন্ত আটক বা জব্দ করা বস্তু মামলার তদন্তকারী অফিসারের হেফাজতে থাকবে।

আটক করা বস্তু অবশ্যই ঘটনাস্থল থেকে স্থানান্তর করে উদঘাটনকারী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণ, দখল ও হেফাজতে নিতে হবে। আটক করা বস্তু ঘটনাস্থল থেকে বহন বা স্থানান্তর করার সময় যাতে সম্পূর্ণ বা আংশিক বিনষ্ট, ক্ষতিগ্রস্ত, বিকৃত বা তছরুপ না হয়- উদঘাটনকারী কর্মকর্তা সেই বিষয়ে দায়বদ্ধ থাকবেন বলেও খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, কোনো বস্তু আটকের পর তার স্থানান্তরের অযোগ্য হলে মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ ও দখল সংক্রান্ত কাগজপত্র, দলিলাদি ইত্যাদি নিজ দখলে নেওয়ার পর ওই বস্তুর মালিক বা স্থানীয় জিম্মাদার রাখা হলে, জিম্মাদার যাতে ওই বস্তুর কোনো পরিবর্তন, স্থানান্তর ইত্যাদি করতে না পারে সেজন্য উদঘাটনকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জিম্মাদার ও মুচলেকা সম্পাদন করবেন।

আটক বা জব্দ করা বস্তুর সংরক্ষণ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাজেয়াপ্তযোগ্য অথবা অপরাধ প্রমাণে সহায়ক আটক বা জব্দ করা সকল বস্তুই আটক বা জব্দের পর যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্র সম্পন্ন আদালতকে অবহিত করতে হবে। মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার আগ পর্যন্ত আটক বা জব্দ করা বস্তু মামলার তদন্তকারী অফিসারের হেফাজতে থাকবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতিক্রমে তা তদন্তকারী অফিসার কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৯ ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসার বা কর্তৃপক্ষের কাছেও থাকতে পারবে।

কোনো বস্তু আটকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসার, তদন্তকারী অফিসার, মামলা পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ব্যতীত অন্য কেউ বহন, ধারণ বা সংরক্ষণ করতে বা দখলে রাখতে পারবেন না বলেও এতে বলা হয়। আটক করা বস্তু যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং শনাক্ত করার জন্য গায়ে পরিচিতিমূলক বর্ণনা, পরিমাণ, সংখ্যা ও অবস্থা সম্বলিত লেবেল ও চিহ্ন সংযোজন করে যথাযথভাবে সিলগালা করে রাখতে হবে। মূল্যবান ধাতবদ্রব্য, অন্যকোনো মূল্যবান বস্তু কিংবা অতিমূল্যবান মর্মে বিবেচিত মাদকদ্রব্য প্রথমত আদালতে জমা দিতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত মতে, সরকারি ট্রেজারিতে সিলগালা করা অবস্থায় জমা রাখতে হবে। জব্দ করা টাকা-পয়সা কিংবা মূল্যবান বস্তু ট্রেজারিতে রাখা যাবে। দাহ্য, বিস্ফোরণযোগ্য এবং বিষাক্ত বস্তুকে অবশ্যই পৃথকভাবে বিশেষ নিরাপত্তা সহকারে সংরক্ষণ করতে হবে।

যে কোনো আটকের ঘটনার পর আটক সম্পর্কে উদঘাটনকারী অফিসার তার নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আটক করা বস্তু অবশ্যই ঘটনাস্থল থেকে স্থানান্তর করে উদঘাটনকারী অফিসারের নিয়ন্ত্রণ, দখল ও হেফাজতে নিতে হবে।

আটক বা জব্দ করা বস্তু ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ ও সিদ্ধান্ত ছাড়া আটক কিংবা জব্দ করা কোনো বস্তু কাউকে ফেরত দেওয়া যাবে না কিংবা এই বিধিমালার কোনো বিধান ব্যতীত কাউকে হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো বস্তু বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই এর প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, যথাযথ প্রামাণ্য দলিল বা কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষে ফেরত দেওয়া যাবে। জরুরি অবস্থায় যদি কোনো পচনশীল বা ক্ষণস্থায়ী দ্রব্য বিধান অনুসারে নিলাম হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে মালিককে ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন হলে নিলামে বিক্রয় করে পাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

এসএইচআর/এসকেডি/জেএস