হেলে পড়েছে রাজধানীর সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রায় ত্রিশ বছরেরও পুরনো দেওয়াল। এই নিরাপত্তা দেওয়ালই যেনো এখন নিরাপত্তাহীনতার কারণ। হেলে পড়া এই দেওয়ালের পাশ দিয়েই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তবুও সংস্কারে বা নতুন করে দেওয়াল নির্মাণে উদ্যোগ নেই কলেজ প্রশাসনের।

সরেজমিনে নিউমার্কেটের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ঘুরে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটক থেকে সাইন্সল্যাবরেটরি এবং ঢাকা কলেজের উত্তর পাশের নায়েমের গলির শুরু থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পর্যন্ত দেওয়ালের জরাজীর্ণ অবস্থা। কোথাও নেই ইট, কোথাও বা খসে পড়ছে পলেস্তারা। হাত দিয়ে ধাক্কা দিলেই নড়ছে গাঁথুনির ইট। মূল প্রস্তরসহ দেওয়ালজুড়ে অসংখ্য ছোট বড় ফাটল।

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা কলেজের সামনের দেওয়ালের। শুরু থেকে একেবারে শেষ সীমানা পর্যন্ত পুরো দেওয়ালই কোথাও সামনের দিকে  কোথাও পেছনের দিকে হেলে পড়েছে। তাকালেই ঢেউ আর নড়বড়ে অবস্থা বোঝা যায়। অপরপাশে নায়েমের গলি সংলগ্ন দেওয়ালও ফাটলে ভরপুর। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই হেলে পড়া দেওয়ালের পাশ দিয়ে ঢাকা কলেজ, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করছেন।

জরাজীর্ণ এই দেওয়ালের সামনের অংশের ফুটপাথেই মাটির তৈজসপত্র, ফুলের গাছ আর আসবাবপত্রের দোকান। দোকানগুলোতেও মানুষের বেশ আনাগোনা থাকে। ফলে দুর্বল এই দেওয়াল ধসে যেকোনো মুহূর্তেই হতে পারে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির একাধিক কর্মচারী জানান, দীর্ঘদিনেও সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি এই দেওয়ালে। পুরনো আদলে শুধু মাটির নিচ থেকে গাঁথুনি দিয়েই তোলা হয়েছে এটি, যার বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর বা তারও বেশি। আবার ইট দিয়ে ওপরে বাড়ানোও
হয়েছে। বেশ কয়েকবছর ধরেই দেওয়ালটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই বছরের টানা বৃষ্টির পর দেওয়ালের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেছে, সংস্কারেরও উপায় নেই। যেকোনো মুহূর্তেই ভেঙে বা ধসে পড়তে পারে।

দেওয়ালের এমন অবস্থায় বেশ উদ্বিগ্ন কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাবিহা জাহান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, হেলেপড়া দেওয়াল দেখলেই ভয় লাগে। গত কয়েকদিন আগেও পুরান ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হেলে পড়া দেওয়াল ধসে ছোট শিশু মারা গেল। এই ফুটপাত খুবই জনবহুল। সারাদিন হাজার হাজার মানুষ দেওয়াল ঘেঁষে চলাচল করে। কলেজ প্রশাসনের উচিত যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ালের পাশ দিয়ে মানুষের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নতুন দেওয়াল নির্মাণ করা।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল, সিটি কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে চলাচল করে। সায়েন্সল্যাবরেটরি থেকে আমরাও পায়ে হেঁটে দেওয়ালের পাশের ফুটপাত দিয়ে কলেজে আসি। আমরা চাই দুর্ঘটনা ঘটার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন ব্যবস্থা নেয়।

এদিকে ঝুঁকি এড়াতে অনেককে দেওয়াল সংলগ্ন ফুটপাথ ছেড়ে মূল সড়ক দিয়েও হাঁটতে দেখা গেছে।

সোনিয়া আফরোজা নামে এক পথচারী বলেন, সেদিন আজিমপুরের ঘটনা দেখে এই ফুটপাথ দিয়ে যেতে ভয় লাগে। কোনদিন দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। এটি জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করা উচিত। আমরা যারা দেওয়ালের হেলে পড়ার বিষয়টি জানি, তারা না হয় সতর্ক। কিন্তু অনেকেই রয়েছে যারা বিষয়টি জানেন না। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

দেওয়াল হেলে পড়ার বিষয়টি কলেজ প্রশাসনের নজরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আরও আগেই দেখেছি। এ নিয়ে আমরা কথাও বলেছি। আমরাও চাই যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি দ্রুত সংস্কার করা যায়। আমি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে চিঠি লিখব, যেনো যত দ্রুত সম্ভব এটি ভেঙে নতুন দেওয়াল নির্মাণ করা যায়। কেননা দুর্ঘটনা ঘটলে দায়িত্বশীল হিসেবে দায় আমার ওপর পড়বে। আমি চেষ্টা করব হেলে পড়া দেওয়ালের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।

আরএইচটি/এমএইচএস