বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেছেন, এখনো নারীর প্রতি বৈষম্য আছে। তবে তাদের মধ্যে যে জাগরণ হয়েছে, তা ইতিবাচক। একটি ন্যায়সম্মত সমাজ গড়তে হলে নারীর ক্ষমতায়নের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। 

শনিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইনে পরিচালিত ‘জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ বিষয়ক ১১তম সার্টিফিকেট কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন জেন্ডার ও নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, নারী জাগরণে, তাদের প্রতি অন্যায় অবিচার রোধে মহিলা পরিষদের কর্মসূচি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। 

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে কিছু নারীর অগ্রসরতা দেখা যাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে নারীর জীবনে তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। 

নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ চিহ্নিত করা গেছে। নারীর প্রতি এ বৈষম্য কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে এখন তাত্ত্বিকভাবে কাজ করার জন্য একাডেমিশিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সহিংসতা কীভাবে নারীর মানবাধিকারকে লঙ্ঘিত করছে, তা এখনো দেখা হয় না। নারীর শ্রমের মূল্যায়ন এখনো করা হয় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় বাধা আছে, এসব বিষয়ে আরও কাজ করার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলন কর্মসূচিকে চলমান রাখতে ‘জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ বিষয়ক ১১তম সার্টিফিকেট কোর্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীদের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিজেদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম বলেন, মহিলা পরিষদ ৫১ বছর ধরে নারী সমাজকে সচেতনে এবং নারীর অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বহুমাত্রিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।  একইসঙ্গে জেন্ডার সংবেদনশীল মানবসম্পদ তৈরি করতে কাজ করছে। নারীবান্ধব নানা আইন গৃহীত হলেও নারীর অংশগ্রহণ এবং অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি দিতে এখনো বৈষম্য দেখা যায়, যার অন্যতম কারণ নারীর প্রতি অধঃস্তন দৃষ্টিভঙ্গি, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন।

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে কোর্স সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেন কোর্স শিক্ষার্থী প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জেন্ডার স্পেশালিস্ট (বাল্যবিবাহ প্রকল্প) নাসরীন নাহার, ডট কনসাল্টিংয়ের সিইও সৈয়দ ফয়সল আহমদ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার অনিন্দিতা বড়ুয়া।

সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফল উপস্থাপন করা হয়। সহযোগিতায় ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদের সদস্য শাহজাদী শামীমা আফজালী, সালেহা বানু এবং আফরুজা আরমান। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ১১তম সার্টিফিকেট কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটির নেতা, সাংবাদিক ও কর্মকর্তাসহ ৬৫ জন যুক্ত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদ সম্পাদক রীনা আহমেদ।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে গত ১২ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ‘জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ বিষয়ক ১১তম সার্টিফিকেট কোর্স অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কোর্সটিতে ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, শিক্ষক এবং ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৫ জন অংশ নেন।

জেইউ/আরএইচ