ইচ্ছে ছিল আইনে পড়বে। নিজেকে যুক্ত করবে আইন পেশায়। কিন্তু তা আর হলো না। আইনজীবী হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল সড়কেই।

নটর ডেম কলেজের মানবিক শাখার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল নাঈম হাসান (১৭)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় মারা যায় সে

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ থেকে ফেরার সময় পল্টন মোড়ের হল মার্কেটের গোল চত্বরে ডিএসসিসির গাড়িটি নাঈমকে চাপা দেয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিন সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালে নাঈমের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ভাই বিইউপি শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ২০২২ সালে নটর ডেম থেকে আমার ভাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আজ সকালে সে কলেজে যায়। কলেজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে চাপা পড়ে মারা যায় সে। 

 বিইউপি শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন

তিনি বলেন, কলেজ শেষ করে ল-তে ভর্তি হতে চেয়েছিল সে। আইনজীবী হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে গেছে। 

কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভাই মামুন। এ সময় তার বাবাকেও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবাকে কোনোভাবেই শান্ত করা যাচ্ছিল না।

নাঈমের ভাই মামুন আরও জানান, ময়নাতদন্ত শেষ হয়ে গেছে। মরদেহ কামরাঙ্গীচরের ঝাউলাহাটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে জানাজা শেষে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার মিয়াজী বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।

ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নাঈমকে নিয়ে আসা হকার জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। আসার সময় দেখেছেন, পুলিশ ঘাতক গাড়িটি ও চালককে আটক করেছে। 
 
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘাতক গাড়ি ও চালক মো. রাসেল খানকে আটক করেছি। নিহতের মামা মামলা দায়ের করবেন। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

নাঈম হাসানের নিহতের খবর নটর ডেম কলেজে ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে শিক্ষার্থীরা মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। সহপাঠী হত্যার বিচার দাবি করে তারা।

এসএএ/আরএইচ