ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে বিএনপি, তাই পাকিস্তানের প্রতি দলটির প্রেম দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।

রোববার (২৮ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি গতকাল (শনিবার) ফ্লোর চেয়েছিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য। কারণ এ হাউজে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটা কেবল অসত্যই নয়, তিনি তার বক্তব্যে চালাকির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘের বক্তব্যকেও টেনে এনেছিলেন। গণমাধ্যমে এসেছে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দল নিয়ে কথা বলায় সংসদে হইচই হয়েছে। বরং তিনি যেটা করতে চেয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে পাকিস্তানের পতাকার ওড়ানোর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন।

গত শনিবার সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যা-ই খেলুক না কেন। পাকিস্তানের সমর্থকরা তাদের পতাকা ওড়াচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে বিদ্বেষমূলক কথা বলা হচ্ছে।

মেনন বলেন, এ রকম ঘটনা এখন শুধু নয়, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেও হয়েছিল বলে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সফর ঘিরেও পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল। এখন আবার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পতাকা উড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করার পরও বিএনপির পাকিস্তান প্রেম দেখতে হচ্ছে। বেগম জিয়া অসুস্থ তাকে নিয়ে কথা বলতে চায় না। পরিকল্পিতভাবে আমাদের গৌরব অধ্যায়কে ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের এক হতে হবে। বিএনপিকে বলব, এখনো সময় আছে, আপনাদের পাকিস্তান প্রেমটা দূরে রাখুন। খেলা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশে অন্যদেশের পতাকা ওড়বে না।

মেনন বলেন, আমি আমার সুবর্ণজয়ন্তীর বক্তব্যে বলেছিলাম পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর ঘটনা পরিকল্পিত কি না আমি জানি না। আজকে দেখছি এটা পরিকল্পিত। দেশে বর্তমানে যে জঙ্গি উত্থান রয়েছে, তার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা জড়িত রয়েছে কি না আমরা জানি না। ক্রিকেট প্রেম এক জিনিস, জাতীয় প্রেম, গৌরব ও পতাকা আরেক জিনিস। খেলার মাঠে তাদের সমর্থন করতে পারি। কিন্তু তার জন্য তরুণরা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে যাবে, সেটা হতে পারে না। এটা পরিকল্পিত।

তিনি বলেন, এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয়ে অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তারা আমাদের সম্পদ ফেরত দেয়নি। আমাদের হিসেব দেয়নি। তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু পাকিস্তান হাইকমিশন যে কাজ করছে সেটা যথাযথ নয় বলে মনে হয়।

পাকিস্তানের হাহকমিশনের অনুষ্ঠানে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো স্পন্সর করে। তাদের সে কার্ডের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম আপনারা দেখতে পারেন। আমরা দেখেছিলাম যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচারের সময় সাফাই গাওয়ার জন্য লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে তা ঠেকানো গিয়েছিল। এগুলো তো ইতিহাস।

এইউএ/এসকেডি