রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-৫ টিকা/ ছবি: সংগৃহীত

• রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকদের প্রয়োগ করা যাবে এটি
• এ অনুমোদন বলবৎ থাকবে ছয় মাস
• পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দায়ী নয় বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের তৈরি স্পুটনিক-৫ টিকা দেশে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। শুধুমাত্র পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকদের প্রয়োগের জন্য এ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাশিয়ার স্টেট অটোমিক এনার্জি করপোরেশনকে (রোসাটম) দেয়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকদের প্রয়োগের জন্য এক হাজার ডোজ স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

তবে চিঠিতে এই অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— 

• আমদানিকৃত টিকা শুধুমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকদের প্রয়োগ করতে হবে।

• ইস্যু করা এই এনসিও ইস্যুর তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় মাস বলবৎ থাকবে।

• টিকাটি ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অধিদপ্তর দায়ী থাকবে না। রাশিয়ার স্টেট অটোমিক এনার্জি করপোরেশন এর সকল দায়-দায়িত্ব বহন করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগতির জন্য চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঢাকায় রুশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে।

স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের আদ্যোপান্ত

শেষ ধাপের পরীক্ষা শুরুর আগেই গত বছরের আগস্টে রাশিয়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর অনুমোদন দেয়। সোভিয়েত আমলে মহাকাশে পাঠানো যানের নামে এই ভ্যাকসিনের নাম করে দেশটি। পরীক্ষা শেষ না হতেই অনুমোদন দেয়ায় অনেক বিশেষজ্ঞ এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এদিকে, ২৬ জানুয়ারি রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ অনুমোদন দিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের মিত্র দেশ ইরান। রাশিয়া গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফলে ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে দাবি করে গত আগস্টে এর অনুমোদন দেয় মস্কো। ভ্যাকসিনটি অ্যাডেনোভাইরাস থেকে তৈরি। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিতে হয়।

প্রাথমিকভাবে রাশিয়া অনুমোদন দেওয়ায় সমালোচকরা এই ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত ডিসেম্বরে বেলারুশ এবং আর্জেন্টিনাতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে ভ্যাকসিনটি। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা এখনও চলমান রয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের শরীরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাশিয়া বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রাথমিকভাবে ১২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদা পাওয়া গেছে। তবে এই চাহিদা ২৪০ কোটিতে উন্নীত হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটি। ভ্যাকসিনের চাহিদার কারণে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায় মস্কো।

রাশিয়াজুড়ে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলো, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হাঙ্গেরি, সৌদি আরব এবং লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে শিগগিরই বিতরণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে মস্কো। তাদের এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এই তাপমাত্রায় কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য সংরক্ষণ করা যায় ভ্যাকসিনটি।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা প্রয়োগ হচ্ছে বাংলাদেশে

এদিকে, গত ৪ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এরপরই, উপহার হিসেবে ভারত সরকারের দেওয়া ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) এ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরই দেশে প্রথম টিকা গ্রহণকারী হিসেবে নাম লেখান কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। প্রথম দিন মোট টিকা নেন ২৭ জন।

টিকা প্রয়োগের দ্বিতীয় দিনে এসে বৃহস্পতিবার মন্ত্রী, আমলা, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের টিকা নেন।

টিআই/এফআর