ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার

বেসরকারি একটি ব্যাংকের চেক-এ ‘ডিসেম্বর’ শব্দটি বাংলায় লেখায় চেক ফেরত দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন- ‘মন চাইছে আত্মহত্যা করি’! এ নিয়ে ঢাকা পোস্টকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বাংলা লেখা দেখলে যারা চেক ফিরিয়ে দেয়, তাদের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। চুপচাপ বসে থাকলে ধারাবাহিকতা হয়ে যাবে। তারা প্র্যাকটিস করবে।

তিনি বলেন, মনে করবেন না যে, আমি মন্ত্রী হয়েছি বলেই প্রতিবাদ করেছি। মন্ত্রী না থাকলেও প্রতিবাদ করব। আমি জন্ম থেকেই প্রতিবাদ করছি। এ প্রতিবাদ আমার রক্তের মধ্যে আছে।

তিনি আরও বলেন, আমার দেশটা তৈরি হয়েছে বাংলা ভাষার জন্য। এই দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বায়ান্ন সাল থেকে বাংলায় বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আমরা তার উত্তরসূরি হিসেবে কেমন করে বাংলা ভাষার বাইরে যেতে পারি? এটা চিন্তারও বাইরে।

ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার রয়েছে জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আগে সবাই বলত বাংলা সব জায়গায় ব্যবহার করা যায় না। আমি বলি, এখন এমন কোনো ডিজিটাল ডিভাইস নেই যেখানে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা যায় না। তাহলে  আমি বাংলা ব্যবহার করব না কেন?

বাংলা ভাষা ব্যবহার আসলে মানসিকতার বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যদি আমি বাংলা ভাষা ব্যবহার না করি তাহলে সেটা আমার মানসিকতা। এই মানসিকতা দূর করা দরকার। যত জায়গায় সম্ভব, যত জায়গায় আমি প্রতিবন্ধকতা পাই, তত জায়গায় প্রতিবাদ করি। কোনো অবস্থাতেই আমি ছাড় দিই না। যে অবস্থা-ই থাকুক, আমি প্রতিবাদ করবই। আমি যে পজিশনেই থাকি, প্রতিবাদ করবই।

তিনি বলেন, যেদিন থেকে ব্যাংকে চেক লিখি, কোনোদিন আমি ইংরেজি হরফ ব্যবহার করিনি। স্বাক্ষরও বাংলায় দিই। অতএব এ অবস্থায় আমি কমপ্রোমাইজ করব না।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে মোস্তাফা জব্বার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, মন চাইছে আত্মহত‌্যা ক‌রি। এক‌টি চে‌কে আমি ‘ডিসেম্বর’ শব্দটি বাংলায় লি‌খে‌ছি ব‌লে কাউন্টার থে‌কে চেক‌টি ফেরত দি‌য়ে‌ছে। কোন দে‌শে আছি?

জানা গেছে, মন্ত্রী তার পরিচিত একজনকে একটি চেক দেন। তাতে ডিসেম্বর মাসের বানানটি বাংলায় লেখা ছিল। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় জমা দিলে চেকটি প্রথমে ফেরত দেওয়া হয়।

ওই ব্যক্তি বাসায় ফিরে মন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করেন। তারপর মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে নিজে ব্যাংকের ওই শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্যাংকের শাখা থেকে পুনরায় চেকটি অনার করা হয়। মন্ত্রীর হিসাব ব্যাংকটির মতিঝিলের প্রধান শাখায়। অতীতে চেক-এ বাংলা শব্দ লিখলেও কোনো সমস্যা হয়নি।

ওই পোস্টের কমেন্টে মন্ত্রী আবার লেখেন, আপনারা অনেকেই আমার দুর্দশায় সংহতি প্রকাশ করেছেন। ধন্যবাদ। কেউ কেউ হা হা করেছেন। তাহারা ‘কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। সুখবর হলো, অবশেষে চাপে পড়ে চেকটির কোনো পরিবর্তন ছাড়াই টাকা দেওয়া হয়েছে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। তারা জানিয়েছে, আর কখনো এমন ভুল বা বাংলা শব্দ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি হবে না।

পিএসডি/আরএইচ/জেএস