করোনা মহামারি চলাকালে দেশের শ্রমবাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কিশোরী ও নারীদের উপর। তাই দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমবাজারে তাদের অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিতে হবে। 

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসডিপি) আয়োজনে আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

‘অনানুষ্ঠানিক খাতে দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরী ও নারী প্রশিক্ষণার্থীদের উপর কোভিড ১৯ প্রতিকূলতা মোকাবিলা’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে.এম. তরিকুল ইসলাম। বিশেষ  অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট এশিয়া, পিআরএল এবং মনিটরিং বিভাগের পরিচালক এএফএম শহীদুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন অনুষ্ঠানে। পরে কিশোরী ও নারীদের বর্তমান অবস্থা এবং সমাধান হিসেবে অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে শিক্ষানবিশ ভিত্তিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি অ্যান্ড প্রিভেনটিং ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির পরিচালক নবনিতা চৌধুরী।

আলোচনায় অংশ নেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ মিস ভিরা মেন্ডনকা, অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহরিয়ার ইসলাম, ইনফরমাল সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মির্জা নুরুল গনি শোভন সিআইপি।

বক্তারা বলেন, করোনা মহামারি চলাকালে দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত প্রায় ৫ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কিশোরী ও নারীদের উপর, যেহেতু বাংলাদেশের মোট নারী শ্রমশক্তির প্রায় ৯১.৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। 

গত বছর ব্র্যাকেরই একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের নিয়মিত আয় এবং কাজের সুযোগ যথাক্রমে ৬৬ এবং ২৪ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়াও, সারাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দা চলার কারণে স্কুল শিক্ষার্থীদের থেকে মেয়েদের ঝরে পরার ঝুঁকিও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যা সমাজের অন্যান্য বিষয়কেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে.এম. তরিকুল ইসলাম বলেন, মুজিববর্ষে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য সব সংস্থা কাজ করছে। সরকার বেশ কিছু শিল্পক্ষেত্র তৈরি করছে, যেখানে নারীরাও কাজ করবে। এত বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে ১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি নারী কর্মরত। কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব ঘটলে এদের বিপর্যয়ের কথাও ভাবতে হবে। কীভাবে তাদের সংকট সামাল দেওয়া যাবে, এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি থাকাও দরকার।

সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ বলেন, সময়ের প্রয়োজনে দক্ষতা উন্নয়ন একটি পরিকল্পিত পছন্দ হওয়া উচিত। ঐতিহ্যগত শিক্ষার পরিবর্তে অনেকে দক্ষতা উন্নয়নের শিক্ষাকে বেছে নিতে পারেন।

পিএসডি/আইএসএইচ