পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশে ট্রেড ইউনিয়ন বাতিল করা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারটা আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ প্রদান এবং মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলসহ ৮টি নবনির্মিত স্থাপনা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশে ট্রেড ইউনিয়ন বাতিল করা হয়েছিল। এরপরে ১৯৮৪ সালে আমার মনে আছে, পঁচাত্তরের পর ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করেছিল জিয়াউর রহমান। এরপর ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদ। ৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি ডায়লগের ডাক দিয়েছিলেন। আমরা বঙ্গভবনে সেখানে গিয়েছিলাম আলোচনা করতে। কিন্তু আলোচনা শুরুর আগেই আমার দুটি শর্ত ছিল। একটা হচ্ছে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিতে হবে। আরেকটা হলো আমাদের ১৪ জন ছাত্র নেতাকে জিয়াউর রহমান ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল, সেই আদেশ বাতিল করার।

তিনি বলেন, আমরা সেই ডায়লগ করার সময়েই এই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এটা অবশ্য অনেকের জানার কথা না বা হয়ত এখন ভুলেই গেছে। কিন্তু আমি আজকের দিনে সেটা স্মরণ করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যই সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন।

এ সময় স্বাধীনতা উত্তরকালে শিল্পকারখানা ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

মালিক-শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক-মালিকদের একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। মালিকদের সবসময় মনে রাখতে হবে এই শ্রমিকরা শ্রম দিয়েই কিন্তু তাদের কারখানা চালু রাখে এবং অর্থ উপার্জনের পথ করে দেয়। সেই সঙ্গে শ্রমিকদেরও এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে, এই কারখানাগুলো আছে বলেই কিন্তু তারা কাজ করে খেতে পারছেন। তাদের পরিবার-পরিজনকে পালতে পারছেন বা তারা নিজেরা আর্থিকভাবে কিছু উপার্জন করতে পারছেন। কাজেই কারখানা যদি ঠিকমতো না চলে তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে।

সরকার প্রধান বলেন, যে কারখানা আপনার রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে অর্থাৎ আপনার খাদ্যের ব্যবস্থা করে বা আপনার জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে সেই কারখানার প্রতি যত্নবান হতে হবে। অনেক সময় আমরা দেখি বাইরে থেকে কিছু কিছু শ্রমিক নেতারা আছেন তারা হয়তো উসকানি দেয় বা কোনো কোনো মহল উসকানি দেয় বা একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবার চেষ্টা করে। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে এখন বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। এই প্রতিযোগতাময় বিশ্বে যদি শিল্প-কলকারখানা এবং উৎপাদন এবং রফতানি এটা যদি সঠিকভাবে চলতে হয় তাহলে কিন্তু কারখানাগুলো যাতে যথাযথভাবে চলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, আর যদি সেখানে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাহলে কিন্তু এই রফতানিও যেমন বন্ধ হবে তখন কর্মপরিস্থিতি থাকবে না। নিজেরাও কাজ হারাবেন এবং তখন বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরতে হবে। সে কথাটা মনে রেখে শ্রমিক যারা তাদেরও কিন্তু নিশ্চয়ই একটা দায়িত্ববান ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজেই এখানে মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালিকদের দেখতে হবে শ্রমিকদের অসুবিধা কী বা তাদের জীবন-জীবিকা সুন্দরভাবে যাতে চলে সেই ব্যবস্থা করা। শ্রমের ন্যায্যমূল্যটা যেন তারা পায় এবং শ্রমের পরিবেশ যেন সুন্দরভাবে থাকে সেটাও যেমন তাদের দেখতে হবে। আবার শ্রমিকদেরও দায়িত্ব থাকবে কারখানাটা যেন সুন্দরভাবে চলে, উৎপাদন যেন বাড়ে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আপনাদের কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে উৎপাদন অব্যাহত থাকায় মালিক-শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিল্পোন্নয়নে মূল চালিকা শক্তি মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক। আমি আশা করি যে আমাদের গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা যাতে গ্রিন ফ্যাক্টরি হয় তার জন্য আমরা বিশেষ সুবিধা দিয়েছি। এই ফ্যাক্টরি তৈরিতে যেসব পণ্য প্রয়োজন হয় সেগুলোরর ট্যাক্স আমরা কমিয়ে দিয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য সুবিধাও আমরা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়েছি। সে শিল্পায়ন শুধু রাজধানীভিত্তিক না, সমগ্র বাংলাদেশেই আমরা বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তুলেছিলেন। আমরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এখন সমগ্র বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি।

এইউএ/জেডএস