মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষণার চারদিন পর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। দেশটির সরকারের প্রতি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ যখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে মহামারি জয় করে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার উৎকর্ষে উন্নয়নের পথে ধাবমান, ঠিক তখনই একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে একদল লবিস্টের ইশারায় হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত অযাচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

হাজারো চড়াই উতরাই পেরিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এ অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। নিরাপদ বিনিয়োগের নিশ্চয়তা, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সাধারণের আস্থা ও অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণেই এ সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করা সহজতর হয়েছে। 

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’-  মতবাদ নিয়ে বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে। এ নীতি অনুযায়ী অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও রয়েছে বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতা প্রতিরোধ ও নব্যসৃষ্ট বিভিন্ন সাইবার অপতৎপরতা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। 

এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতর ও পররাষ্ট্র দফতর কর্তৃক বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্য উদ্বিগ্ন। 

বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাংলাদেশ পুলিশকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদস্যদের সব ধরনের অপেশাদার আচরণ রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছেন।

করোনাকালে বর্তমান আইজিপির নেতৃত্বে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব , আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে সর্বাধিক পুলিশ সদস্য মানবতার সেবায় জীবন বিসর্জন করেন। বর্তমান আইজিপির নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পুলিশ এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ মানবিক পুলিশ হিসেবে ভূমিকা রাখে। 

আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনাকারী বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের প্রতি অবিচল আস্থা এবং শ্রদ্ধা রেখে দেশ ও জনগণের কল্যাণে অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পুলিশ দেশের যেকোনো প্রয়োজন ও সংকটে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। 

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণে যখন বাংলাদেশ পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, তখন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের। তাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আহ্বান করা হচ্ছে।

১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও র‍্যাব–৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির পররাষ্ট্র দফতর। 

এআর/আরএইচ