হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শিশু সন্তানের সামনে বিধবা মা নুরচান বেগম (৪০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আদম খান ওরফে রফিককে ২২ বছর পর গ্রেফতার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৯ এর অভিযানে মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে আদম খানকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯৯৯ সালের ৩১ মে আর্থিক লেনদেনের জের ধরে নুরচান বেগমকে (৪০) তিন বছরের শিশু সন্তান তাজউদ্দিনের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছিলেন আদম খান।

হত্যাকাণ্ডের পর আত্মগোপনের জন্য ভুয়া জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে ঢাকার আশুলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। ২২ বছর ধরে রাজমিস্ত্রি হিসেবে রফিক নামে পরিচয় দেন আদম খান।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে দাবি র‍্যাবের। 

আজ বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, নুরচান বেগম হত্যার ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় তার ছেলে শফিক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সেসময় এলাকাবাসী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন।

মামলার তদন্ত শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ২০০২ সালের ১৭ জুলাই আদালত আদম খাকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। 

কমান্ডার মঈন বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর পর গতরাতে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে আদম খানকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৯ এর যৌথ দল।

র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আদম খান জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের এক বছর আগে নুরচান বেগমের ছেলে শফিকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নেন আদম খান। চার-পাঁচ মাস পর শফিকের বাবা নুরচান বেগমের স্বামী আব্দুর রহমান মারা যান। তখন পরিবারে আর্থিক অনটন দেখা দেয়। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে পাওনা টাকা চাইলে আদম খান তালবাহানা শুরু করেন এবং গালিগালাজ ও অপমান করেন।

এ সময় নুরচান বেগম প্রতিবেশী আছমত উল্লাহর কাছে তার তিন বছরের কোলের শিশু তাজউদ্দিনকে নিয়ে ঘটনার বিচার চাইতে গেলে আদম খান আছমত উল্লাহর ঘরে এসে নুরচানের বুকের বাম পাশে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এতে মারা যান নুরচান বেগম।

জিজ্ঞাসাবাদে আদম খান আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর গ্রাম থেকে পালিয়ে তিনি সিলেট শহরে সপ্তাহখানিক অবস্থান করেন। এরপর ঢাকার আশুলিয়ায় এসে গা ঢাকা দেন।

২০১২ সালের মার্চ মাসে আদম খান মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন। সেখানে তিনি নিজের নাম লেখেন রফিকুল ইসলাম, পিতা নুর ইসলাম, বর্তমান ঠিকানা-বাইপাইল। এই সনদপত্রের মাধ্যমে তিনি একটি এনআইডির জন্য আবেদন করেন, যেখানে তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মাদবপুর, হবিগঞ্জ উল্লেখ করেন।

চেহারা পরিবর্তন করার জন্য তিনি এ সময় ছদ্মবেশ ধারণ করেন। আসল নাম আদম খানের পরিবর্তে নিজেকে রফিক নামে আশুলিয়ায় পরিচিত করে তোলেন।

পরবর্তীতে তিনি ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি স্মার্ট এনআইডি কার্ড তৈরি করেন। অতঃপর ধীরে ধীরে আশুলিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন এবং ছদ্মবেশে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করে। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর তিনি তার গ্রামের বাড়িতে যাননি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এইচকে