ফ্লাইটের টিকিটের মূল্য আগের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশে যুব অধিকার পরিষদ। টিকিটের মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি। 

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রবাসীদের বিমানবন্দরে হয়রানি ও ফ্লাইটের টিকিট মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করে যুব অধিকার পরিষদ। 

মানববন্ধনে সংগঠনের সদস্য সচিব নুরুল হক বলেন, আমরা এক সপ্তাহের সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে যদি বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা না হয়, বিমানের টিকেটে মূল্য যদি পুনর্বিবেচনা করা না হয়, তাহলে করোনার সময় যেমন ৩৮৩ জন প্রবাসীর মুক্তির দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেছি, আজকে এখানে যেই জনসংখ্যা আছি, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোক নিয়ে আবার প্রয়োজনে সেই মন্ত্রণালয় ঘেরাও করব।   

নূর বলেন, পত্রিকায় রিপোর্ট দেখলাম, গত ৫-৭ বছরে দেশে ইমেজ বৃদ্ধি পায় কিংবা দেশের সম্মান বৃদ্ধি পায়, বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয়, শ্রম বাজারের উন্মুক্ত হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলো নিতে পারেনি। তাহলে তারা কী করেছে? তারা বিনা ভোটের সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে প্রোটকল দিতে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত ছিল। এমনকি তারা এমপি-মন্ত্রী, সরকারির দলের নেতাদের শ্যালক-শ্যালিকা, আত্মীয়-স্বজনদের প্রোটকল দিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। 

তিনি বলেন, অন্যদিকে যে প্রবাসীদের নিয়ে আমরা টকশো করি, পত্রিকায় মাঝে-মাঝে গল্প লেখা হয়, করোনার মধ্যে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে, সেই সময় কাতার থেকে ফোন পাই, ‘ভাই আমি আজকে তিন মাস পাসপোর্টর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের দূতাবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’

দেশে যে নৈরাজ্য চলছে তার সহজ কোনো পরিত্রাণ নেই বলে মন্তব্য করে নুর বলেন, রাজপথে রক্ত দেওয়া ছাড়া, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিত্রাণ নেই। কারণ সরকার সমস্ত শান্তিপূর্ণ পথকে বন্ধ করে দিয়েছে। এরা জোর করে ক্ষমতায় আছে। আমরা যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে রাজপথে রক্ত দেওয়ার জন্য নামতে হবে। সুশাসন ছাড়া এই নৈরাজ্য বন্ধ হবে না। গণতন্ত্র না থাকলে সুশাসন কোথায় থেকে আসবে।

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে বলে উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের যে বিধি ব্যবস্থা ছিল সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ‍দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এরা যতদিন থাকবে ছাত্র-শিক্ষক, প্রবাসী কেউ রেহাই পাবে না। আমাদের অস্তিত্বের জায়গায় এসে ঠেকেছে, তাই সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে নামতে হবে।

নূর আরও বলেন, শ্রমিকদের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। থাকলে বিমানের টিকিটে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শ্রমিকদের প্রবাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করত সরকার। টিকিটের দাম বাড়াত না।

ছাত্রলীগের সমালোচনা করে নূর বলেন, কক্সবাজারে এক নারীকে তুলে ধর্ষণ করা হয়েছে। কারা করেছে ছাত্রলীগ, ঠাকুরগাঁও দশম শ্রেণীর ছাত্রকে হত্যা করেছে তারা। কী লজ্জার বিষয়, সেই হত্যার প্রতিবাদে পুলিশ বাধা দিয়েছে।   

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে দুলাল নামের এক প্রবাসী অভিযোগ করেন, কয়েক বছর আগে আমি ৪০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া দিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। আর এখন সেই ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ আমাদের পাশের দেশ কলকাতা থেকে সৌদি আরব যেতে বিমানে ভাড়া লাগছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিমানবন্দর, পাসপোর্ট তৈরি, মেয়াদ বাড়াতে হয়রানির তো শেষ নেই প্রবাসীদের।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুব অধিকার পরিষদের নেতা তারেক রহমান, ফারুক হোসাইন, রোজী ইসলাম প্রমুখ।

এএইচআর/ওএফ