চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া গার্মেন্টস পণ্য গাড়ি থেকেই চুরি করত একটি চক্র। তারা সিলগালা করা কাভার্ড ভ্যান থেকে কার্টন নামিয়ে কিছু পণ্য রেখে আবার তা প্যাকেট করে দিত। এতে কম সংখ্যক পণ্য বিদেশে যেত।

এই চোরাকারবারিদের কারণে বিদেশে গার্মেন্টস শিল্পের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে বিঘ্ন হয়ে আসছিল। চক্রটির সঙ্গে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের হেলপার-ড্রাইভারসহ অনেকে জড়িত আছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রফতানি পণ্য চোরচক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাব। এ সময় জোবায়ের পারভেজসহ অজ্ঞাত আরও চার আসামি পালিয়ে যান। ঢাকা-চট্টগ্রামে এই ধরনের আরও কয়েকটি চক্র আছে বলে ধারণা করছে র‍্যাব।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চান্দাগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, বন্দর দিয়ে রফতানির উদ্দেশ্যে কাভার্ড ভ্যানে পণ্য পাঠালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোনো এক জায়গায় চুরি হয়ে যাচ্ছে। কার্টন থেকে কিছু পণ্য নামিয়ে সেটা আবার প্যাকেট করে চোরচক্রটি বন্দরে নিয়ে যায়। অনেক সময় অর্ধেক মালামালও চুরি করে রেখে দিত চক্রটি। এসব কার্টন বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছার পর তারা দেখতে পান, যে পরিমাণ পণ্য অর্ডার করেছিলেন তা নেই। এতে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদেশি ক্রেতাদের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে অনেকেই ক্রেতা হারিয়েছেন।

এম এ ইউসুফ বলেন, ইতালিতে রফতানির উদ্দেশে শুক্রবার ঢাকা থেকে কাভার্ড ভ্যানে ৪০ হাজারের মতো গার্মেন্টস পণ্য পাঠানো হয়েছিল। পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে লোড হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পথিমধ্যে ফেনীর ছাগলনাইয়ার বিসিক এলাকায় কাভার্ড ভ্যানটি নিয়ে যায় চোর চক্র। প্রায় ১৮ হাজারের মতো মালামাল নামিয়ে ফেলছিল চক্রটি। মালামাল উদ্ধারসহ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

চক্রটির চুরির বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, চোরচক্রটি অত্যন্ত সুকৌশলে পণ্য চুরি করে থাকে। ঢাকা থেকে মালিকপক্ষ গার্মেন্টস পণ্য লোড করার পর কাভার্ড ভ্যানটি সিলগালা করে দেয়। তারা সিলগালা অবস্থাটি অক্ষত রেখে দরজার নাট-বল্টু খুলে ফেলে। এরপর তারা কার্টন খুলে সেখানে থেকে মাল রেখে কার্টনগুলো আবার লাগিয়ে দেয়। এরপর দরজা লক করে পণ্যগুলো বন্দরে নামিয়ে দিয়ে আসে। বিদেশে ক্রেতার হাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত চুরির বিষয়টি কোনোভাবেই ধরে পড়ে না।

র‍্যাব-৭ অধিনায়ক বলেন, ভবিষ্যতেও আমাদের এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এটি দেশের ভাবমূর্তির বিষয়। উদ্ধার করা পণ্যগুলো দ্রুত মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

চক্রটি চুরি করা মালামাল দেশের বিভিন্ন দোকান, মার্কেট ও ফুটপাতে বিক্রি করে থাকে বলে প্রাথমিকভাবে র‍্যাব জানতে পেরেছি। এগুলো বিক্রির জন্য তাদের একটি সিন্ডিকেট আছে। র‍্যাব বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

কেএম/এমএইচএস