দুবাইয়ে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ক্যাডাররা টাকার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের টার্গেট করত। এক লাখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দাবি করত। টাকা না দিতে পারলে মেরে ফেলার হুমকি দিত তারা। এরপরও কেউ টাকা না দিলে প্রকাশ্যে গুলি করত জিসানের ক্যাডাররা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সন্ত্রাসী জিসানের সাত ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন— মো. নাসির, কাওছার আহমেদ ইমন, মোহাম্মদ জীবন হোসেন, মো. ওমর খৈয়াম নিরু, ফারহান মাসুদ সোহান, মো. আসলাম ও মো. মহিনউদ্দিন জালাল।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গত ১৯ নভেম্বর পূর্ব বাড্ডা আলিফ নগর এলাকার জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান ওরফে টুটুলকে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা সঠিক সময় না দিলে সন্তানসহ পরিবারের ওপর হামলা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে গত ২১ নভেম্বর বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে জেনারেটর ব্যবসায়ী টুটুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অজ্ঞাতনামা দুই/তিন জন ব্যক্তি প্রবেশ করে চাঁদার টাকা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করে চলে যায় তারা। পরে সন্ত্রাসীরা আবারও ফোন করে দাবি করা চাঁদার পাঁচ লাখ টাকা চায়। এরপর টুটুল বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মামলার তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে সন্ত্রাসী মো. নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর বাড্ডা ও বান্দরবান থেকে বাকি ছয় আসামি কাওছার, জীবন, নিরু, সোহান, আসলাম ও মহিনউদ্দিনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের জোনাল টিম। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩ রাউন্ড গুলি এবং ৬০০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায় দুবাইয়ে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও তার ভাই শামিম এবং কাশিমপুর কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী মামুনের ক্যাডার ইমন, জীবন এবং নিরুর টাকার প্রয়োজন হলে তারা এলাকার বড় ভাই মো. মহিনউদ্দিন জালালের কাছে যায়। তাদের একটি ‘কাজ’ অর্থাৎ ‘টার্গেট’ দেওয়ার জন্য বলে। পরে মো. মহিনউদ্দিন জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান ওরফে টুটুলের খোঁজ দেয়। নিরু, জীবন, ইমন কাজটি করার জন্য বাসের হেলপার নাসিরকে ঠিক করে। কীভাবে গুলি করতে হবে তা নাসিরকে ক্যাডার জীবন শিখিয়ে দেয়।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা টুটুলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কয়েকবার টুটুলকে চাঁদার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে টুটুল টাকা না দিলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গিয়ে গুলি ছুড়ে তারা। এ ঘটনার পর টুটুল ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মামলা করেন।

গ্রেফতাররা দুবাই প্রবাসী চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ক্যাডার বলে স্বীকার করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উপাত্ত বিশ্লেষণে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় বলেও জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।

এমএসি/এসএসএইচ