সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি), আদালত আর নালায় চোখ রাখতে রাখতেই ২০২১ পার করেছে চট্টগ্রামবাসী। বছরের শুরুতে স্ত্রী মিতু হত্যায় স্বামী থেকে আসামি বনে যান সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এরপর বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল সিআরবি। হাসপাতালের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে চট্টগ্রামের ‘মাঠ গরম’ ছিল বছরজুড়ে। তবে এবার সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল নালা। প্রতি বছর নালা জলাবদ্ধতার জন্য আলোচিত হলেও এবার নালা আবির্ভূত হয় ঘাতক হিসেবে।

শুধু এ বছরই নালায় পড়ে মারা যান পাঁচ জন। তার মধ্যে একজনের মরদেহ পাওয়াও যায়নি। এছাড়া সিডিএ-চসিক বাগযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক হামলা, কারাগার থেকে আসামির পলায়ন চট্টগ্রামবাসীর আলোচনার খোরাক জুড়িয়েছে বছরজুড়ে। এছাড়া করোনা আক্রান্তদের আইসিইউ নিয়ে হাহাকার ছিল অনেকটা সময় ধরে। করোনাকালীন মানবিক কার্যক্রমে প্রশংসিত হয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশ। তবে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে চাঁদা নেওয়ায় ছয় পুলিশ সদস্য বহিষ্কারের বিষয়টিও ছিল আলোচনায়।

চট্টগ্রাম নগরীর অরক্ষিত খাল-নালা

২০২১ সালে চট্টগ্রামে খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন একজন। তবু দুর্ঘটনা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। গত ৩০ জুন মেয়র গলি এলাকায় টিঅ্যান্ডটি কলোনির বাইলেন দিয়ে যাওয়ার সময় চশমা খালে পড়ে গিয়েছিল একটি সিএনজি অটোরিকশা। বৃষ্টির কারণে খালটি তখন ছিল পানিতে টইটম্বুর। পাহাড়ি ঢলের স্রোতও ছিল প্রচণ্ড। সেখানে মৃত্যু হয় দুই জনের।

এরপর ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় হাঁটার সময় পা পিছলে নালায় পড়ে যান সবজি ব্যবসায়ী ছালেহ আহমদ। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। এখনও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এরপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। তারপর গত ৩০ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ী স্টেডিয়াম সংলগ্ন ফুটপাত ধরে হাঁটার সময় নালায় পড়ে পা ভেঙে যায় কলেজছাত্র ইয়াসিন আরাফাতের। সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর এলাকায় খালে খেলনা তুলতে গিয়ে নিহত হয় কামাল হোসেন নামে এক শিশু। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে খালে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নালায় স্ল্যাব বসানোর কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। নগরীর খাল-নালায় স্ল্যাব ও ব্যারিয়ার দেওয়ার ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছে নগর সংশ্লিষ্ট দুই সংস্থা- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের খাল ও নালার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। এ ধরনের চওড়া ও গভীরতা সম্পন্ন খালগুলোর পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা জরুরি। দেয়াল বা গ্রিল দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে। যেসব সংস্থা উন্নয়নমূলক কাজ করছে তাদের কাজ করার সময় জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে। কনস্ট্রাকশনের কাজ চলার সময় যে ঠিকাদার কাজ করবে, তাদেরই কাজ চলা অবস্থায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার সেই ঠিকাদার বা যারা কাজ করছে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে কি না তা খোঁজ নেওয়া তদারকি সংস্থার দায়িত্ব। আমরা আশা করছি যেসব সংস্থা উন্নয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।

মিতু হত্যা মামলায় আসামি স্বামী বাবুল আক্তার

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১১ মে ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। তারপর তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। এখনও কারাগারে বন্দি আছেন বাবুল আক্তার।

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে একাধিকবার। বর্তমানে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুককে। তিনি ঢাকা পোস্টকে সম্প্রতি বলেছিলেন, মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে। দ্রুততম সময়ে চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মিতুর বাবার করা মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই।

রেলওয়ের সিআরবিতে হাসপাতাল ও রেলগেট দুর্ঘটনা

বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসার পরপরই বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাতিল বা সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেন রাজনীতিবিদ, পরিবেশবাদীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তারা বলছেন, স্থানটিতে হাসপাতাল হলে পুরো সিআরবি এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হবে। পাহাড় ও গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণ হলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া হাসপাতালটিকে কেন্দ্র করে আরও যেসব অবকাঠামো তৈরি হবে, তাতে সিআরবি ও আশপাশের এলাকার সবুজ পরিবেশ, গাছপালা, পাখ-পাখালি ও জীববৈচিত্র্যের বিনাশ হবে। কোলাহলময় হয়ে উঠবে এলাকাটি। হাসপাতালের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে এখনও আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। হাসপাতাল করতে অটুট অবস্থানে রয়েছে রেলওয়ে। আন্দোলনের মধ্যেই প্রকল্পটির নামকরণ হয়েছে। চট্টগ্রামের সিআরবি সংলগ্ন ছয় একর জমিতে নির্মিতব্য প্রকল্পটির নাম হবে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স’। শিগগিরই প্রকল্পের ভৌতকাজ শুরু করতে যাচ্ছে বাস্তবায়নকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ‘স্টাবলিশমেন্ট অব এ ৫০০ বেড মাল্টি স্পেশিয়ালিটি হসপিটাল অ্যান্ড এ ১০০ সিট মেডিকেল কলেজ অন বাংলাদেশ রেলওয়ে সিট অ্যাট চিটাগাং’ শিরোনামে প্রকল্পটি রেলওয়ের প্রথম পিপিপি প্রকল্প।

এছাড়া ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা রেলগেটে ডেমু ট্রেনের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পো ও বাসের সংঘর্ষে তিন জন নিহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিষয়ে পুলিশ বলেছিল, রেলক্রসিংয়ের বারটি ফেলা হয়নি। বার না ফেলার কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোটি একটু এগিয়ে ছিল। পেছন থেকে একটি বাস দ্রুত এসে গাড়ি দুটিকে ধাক্কা দিয়ে রেললাইনের ওপর উঠিয়ে দেয়। তখন দ্রুতগতির ট্রেনটি ধাক্কা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল মনির উদ্দিন, সিএনজিযাত্রী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ ও কলেজ শিক্ষার্থী সাতরাজ উদ্দিন শাহীন নিহত হয়। আহত হয়েছেন আরও সাত জন। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হয়েছে। পরে বাস চালক ও গেটম্যানকে গ্রেফতার করা হয়।

নির্দোষ মিনুর কারাভোগ ও কারাগার থেকে আসামি পলায়ন

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার নানা ঘটনার কারণে বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ এড়াতে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনের সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ৬ মার্চ ভোরে ফরহাদ হোসেন রুবেল নামে এক হাজতি পালিয়ে যায়। সদরঘাট থানার হত্যা মামলায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান তিনি। এরপর গত ৯ মার্চ পালিয়ে যাওয়া রুবেলকে নরসিংদীর জেলার রায়পুরা থানার বাল্লাকান্দি চর এলাকা থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম গ্রেফতার করে। হাজতি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার মুহাম্মদ আবু সাদ্দাতকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এছাড়া কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কারারক্ষী ইউনুস মিয়াকে প্রত্যাহার করা হয়ে। সহকারী প্রধান কারারক্ষী কামাল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
 
এছাড়া চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে জেলখাটা নিরপরাধ মিনু প্রায় তিন বছর পর চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন গেল বছরের ১৬ জুন বিকেল ৪টার দিকে। আদালত সূত্র জানায়, মোবাইল ফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এ মামলার রায়ে আসামি কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের দিন কুলসুম আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। সাজা ঘোষণা হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম সেজে মিনু আক্তার কারাগারে আসেন। গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। এ আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠানো আসামির সঙ্গে প্রকৃত আসামির মিল নেই। এছাড়া কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই। এ আবেদনের শুনানি শেষে কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। তখন তিনি জানান, তার নাম মিনু, তিনি কুলসুম নন। আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারগুলো দেখে হাজতি আসামি কুলসুম ও সাজাভোগকারী আসামির চেহারায় অমিল খুঁজে পান। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি নথি হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে সংযুক্তির জন্য পাঠিয়ে দেন। পরে হাইকোর্ট গত ৭ জুন নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে মাত্র ১২ দিন বেঁচে ছিলেন মিনু। ২৮ জুন বায়েজিদ লিংক রোডে গাড়ির ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়।

প্রদীপের দুর্নীতি মামলায় বিচার শুরু 

কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলার বিচার শুরু হয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর। এ মামলায় গত ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও পলাতক রয়েছেন তার স্ত্রী চুমকি। জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাবের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো অস্তিত্ব পায়নি দুদক।

সিডিএ-চসিক বাগযুদ্ধ

নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় একে অপরের ওপর দোষারোপ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম যখন জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে, তখন একে অপরকে দোষারোপ করেছে সংস্থা দুটি। তবে বছর শেষে একসঙ্গে কাজ করার আশার বাণী শুনিয়েছে সংস্থা দুটির প্রধানরা। 

মানবিক পুলিশ-অপরাধী পুলিশ

চট্টগ্রামে করোনাকালে বিভিন্ন সেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। গরিব অসহায় মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছিল তারা। এছাড়া করোনা রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য চালু করেছিল ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা। এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের জরুরি মুহূর্তের অক্সিজেন সুবিধা দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছিল অক্সিজেন ব্যাংক। যে কেউ ফোন করে প্রত্যেক থানা থেকে এ সেবা নিতে পারেন। এছাড়া ২৫ নভেম্বর অপরাধ দমনে নতুন ডিজিটাল কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এ কন্ট্রোল রুমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আইজ অব সিএমপি’। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট রুম থেকে পুরো নগরীকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের প্রায় ৭০০ সিসিটিভি ক্যামেরা প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয় আইজ অব সিএমপির জন্য। এর মধ্যে থেকে ৪১১টি ক্যামেরার সংযোগ দেওয়া হয়েছে সিএমপির কন্ট্রোল রুমে এবং ৩২৪টি ক্যামেরা ২৪ ঘণ্টা অনস্ক্রিন সচল থাকে।

গত ১৮ নভেম্বর সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, গত এক বছরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ২৭ সদস্যকে মাদক গ্রহণসহ বিভিন্ন অপরাধে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত এক বছরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রায় ২০০ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাকি পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। ডোপ টেস্টের বাইরে আরও ২১ জন চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু আছেন ব্যক্তিগত অপরাধে যেমন- যৌতুকের মামলা আর কিছু চাকরিচ্যুত হয়েছেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায়। এর মধ্যে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ছয় পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

সাম্প্রদায়িক হামলা

গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে একদল লোক জেএমসেন হল পূজামণ্ডপের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা ঢিল ছুড়ে এবং পূজার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে আধা বেলা হরতালের ডাক দেন। ওই দিন সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন হরতাল সমর্থকরা। গত ২১ অক্টোবর চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা ও ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়াসহ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক মো. নাছির, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান এবং বায়েজিদ থানার সভাপতি ডা. রাসেলও রয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা ও ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়াসহ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী এলাকায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রামে ভূমিকম্প আতঙ্ক

গত ২৬ নভেম্বর ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল চট্টগ্রাম থেকে ১৭৫ কিলোমিটার পূর্বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ৪২ কিলোমিটার। এ ভূমিকম্পে দুটি ভবন হেলে পড়েছে। এরপর ২৭ নভেম্বর বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে চট্টগ্রামে আবার মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়াক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ভূমিকম্পের জন্য যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ফল্ট লাইন আছে তার বেশ কয়েকটা বাংলাদেশের আশপাশে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পড়েছে। এ অঞ্চলে যে ফল্ট লাইন আছে তাতে ৭.৫ থেকে ৮.৫ মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে।

কেএম/এসএসএইচ