নিজেই ঠিকাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিল পরিশোধেরও চেষ্টা করেন তিনি। তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী অসীম কুমার ঘোষকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি মডস জোন- ৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন।

রোববার (২ জানুয়ারি) ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক অফিস আদেশে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত (Dismissal From Service) করা হয়। অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।

অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘তার (অসীম কুমার ঘোষ) বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মডস জোন- ৮ এর আওতাধীন প্রায় ৪০ লাখ টাকার বিভিন্ন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ঠিকাদারদের নিকট হতে অর্থ নিয়ে নিজেই ঠিকাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কাজ না করেই বিল পরিশোধের চেষ্টা করেছেন।

তিনি ২০০৮ সাল হতে ব্যবহৃত বিল রেজিস্ট্রারে অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কয়েকটি ক্রমিক অর্থাৎ কার্যাদেশ নম্বর বাদ দিয়ে এন্ট্রি করতে সংশ্লিষ্ট ইউডিএ- কে জোরপূর্বক বাধ্য করেন। পাশাপাশি বসুন্ধরা পাম্প হাউজ- ১ ও ২ এর মেরামত রক্ষণাবেক্ষণের প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার কাজে মাত্র ২ থেকে ৩ ট্রাক বালি ফেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী দ্বারা সম্পূর্ণ বিল মেজারমেন্ট বুকে লিপিবদ্ধ করে উপস্থাপন করেন। যা পরবর্তীতে সরেজমিনে বর্ণিত পাম্প হাউজে ২ থেকে ৩ ট্রাক বালি ছাড়া কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়া বসুন্ধরা পাম্প হাউজ ৩ ও ৪ এর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সম্পূর্ণ বিল উপ-সহকারী প্রকৌশলী কর্তৃক বিল মেজারমেন্ট বুকে লিপিবদ্ধ করে উপস্থাপন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে পরিদর্শনে কাজটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়।’

অফিস আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, বিগত ২০১৭ সালের ২২ জুন হতে ২ জুলাই পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে বিদেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও মেজারমেন্ট বুকে স্বাক্ষর করেন। তার এরূপ কার্যকলাপ অফিসের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় এবং তিনি বিভাগীয় মামলার জবাব দাখিল করেন। দাখিলকৃত জবাবে ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছা প্রকাশ করায় তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। তার দাখিলকৃত জবাব ও শুনানিকালে প্রদত্ত বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটির তদন্তকার্য সম্পাদনের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরী প্রবিধানমালা, ২০১০ এর ৩৮ (ক), (খ), (চ) ও (ছ) প্রবিধি মতে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, তহবিল তসরুপ বা প্রতারণা ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কার্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং অভিযোগগুলো গুরুদণ্ডযোগ্য বিধায় উক্ত প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৯ (১) (খ) (ঈ) প্রবিধি মতে কর্তৃপক্ষের চাকুরী হতে বরখাস্ত (Dismissal From Service) করা হলো— উল্লেখ করা হয় ওই অফিস আদেশে।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি-অনিয়ম, দুর্নীতিবাজদের কোনো জায়গা নেই। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ওয়াসাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর জায়গা নেই। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএসএস/এমএআর/