ডা. মুরাদ হাসান

কয়েকদিন ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ মানসিক নির্যাতন চালানোর পর বৃহস্পতিবার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে যান সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। হাত তোলার আগেই জরুরি সেবা ৯৯৯ -এ কল করেন তার স্ত্রী। এরপরই মুরাদের ধানমন্ডি ২৮ নম্বরের (পুরাতন) বাসায় যায় পুলিশ।

তবে পুলিশের মুখোমুখি হননি ডা. মুরাদ। বাড়িতে পুলিশ ঢোকার মিনিট চারেক আগেই নিজ গাড়িতে বাসা ত্যাগ করেন তিনি।

কেন স্ত্রীর সঙ্গে একজন সংসদ সদস্যের এমন আচরণ- জানতে মুরাদের বাসায় উপস্থিত হন ধানমন্ডি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম। প্রথমে ঢুকেই যখন নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন কিছুক্ষণ আগেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান ডা. মুরাদ।

এরপর বাড়ির ডি-১ নম্বর ফ্ল্যাটে যান সাইফুল ইসলাম, ধানমন্ডির এসআই রাজিবসহ মোট ছয় থেকে সাতজন কর্মকর্তা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ভেতরে সবকিছু স্বাভাবিকই পেয়েছি। বাসায় সে সময় ছিলেন ডা. মুরাদের স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান, তার ও-লেভেল পড়ুয়া ১৬ বছরের মেয়ে এবং ফাইভ পড়ুয়া ১১ বছরের ছেলে। পুলিশকে পেয়ে তারা তাদের কথাগুলো বলতে থাকেন। তারা বলেন, সম্প্রতি চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি এবং নায়ক ইমনের সঙ্গে একটি অডিও ভাইরাল ফাঁস হওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। একপর্যায়ে মুরাদ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে কানাডায় গিয়ে থাকবেন বলেও জানান। তবে কানাডার ইমিগ্রেশন থেকে ব্যর্থ হয়ে আবারো ফিরে আসেন পরিবারের কাছে।

মুরাদের স্ত্রী পুলিশকে জানান, মুরাদ ও তার স্ত্রীর সংসার গত ১৯ বছরের। তবে গত দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। অডিও ফাঁসের পর থেকেই এর সূত্রপাত। মুরাদ সবসময় তার স্ত্রীকে ছোট করে কথা বলতেন। সন্তানরা কিছু বললে (মুরাদ) ভাবতেন স্ত্রী শিখিয়ে দিয়েছে। এসব বিষয়ে স্ত্রীকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন তিনি।

মুরাদের স্ত্রীর দাবি, মন্ত্রিত্ব হারানোর পর প্রায়ই উন্মাদের মতো আচরণ করেন মুরাদ। সবাইকে ‘দেখে নেব, মেরে ফেলব’ বলে হুমকি দিতেন। বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে তিনি সন্তানদের গালিগালাজ করেন এবং স্ত্রীকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। নিজেকে বাঁচিয়ে ৯৯৯ -এ কল দেন স্ত্রী। সর্বশেষ রাত ৯ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মুরাদ ফেরেননি বাড়িতে।

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযোগ শুনে বাড়িতে গিয়েছি। ডা. জাহানারার কাছ থেকে সব কথা শুনে তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিই। অভিযোগে তিনি বলেন, ডা. মুরাদের এমন আচরণ আগে ছিল না, এটা সম্প্রতি হয়েছে। সম্প্রতি তুচ্ছ বিষয় নিয়েই স্ত্রীকে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দেন তিনি। আজ তার সন্তানরাও হুমকি শুনে ভয় পেয়েছে; তাই পুলিশকে বলেছে।

মুরাদের বাসার পাশেই নিয়মিত ডিউটিতে ছিলেন ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে আমিও ঘটনাস্থলে যাই। তারা পুলিশের কাছে ঘটনা খুলে বলে। পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডা. মুরাদের স্ত্রী ধানমন্ডি থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজীব। তদন্তের বিষয়ে রাজীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে কিছুক্ষণ আগেই থানা থেকে জানানো হয়েছে যে আমি তদন্ত কর্মকর্তা। আমি জিডির কপিটি এখনো হাতে পাইনি। কপি পেলে আমি আমার তদন্ত শুরু করব।
 
বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। এরপর তাকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। বিতর্কের মুখে দেশ ত্যাগ করলেও কানাডায় ঢুকতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তারপর থেকেই আড়ালে রয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান।।

এআর/এমএসি/আরএইচ