নেত্রনালী অস্ত্রোপচার করার পরিবর্তে চোখের ছানি অপারেশন করে কৃত্রিম ল্যান্স লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিজানুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

রোববার (৯ জানুয়ারি) খুলশী থানায় এ মামলা দায়ের করেন ভুল চিকিৎসার শিকার রোগী হালিমার ভাই আবুল হোসেন আকাশ। মামলায় অভিযুক্ত এ চিকিৎসক ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩-৪ জন ডাক্তার-নার্সকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
 
সোমবার (১০ জানুয়ারি) মামলা দায়েরের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, হালিমা নামের এক রোগীর ভাই আবুল হোসেন আকাশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার বোনের নেত্রনালীর অপারেশন করার পরিবর্তে চোখে ল্যান্স লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে তার বোনের চোখ থেকে পানি পড়ছে ও ব্যথায় ছটফট করছে। বর্তমানে তার বোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলেও জানিয়েছেন আকাশ। 

মামলার এজাহারে বাদী আবুল হোসেন আকাশ উল্লেখ করেছেন, তার বোন হালিমা (১৮) সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। বোনের নাকের নেত্রনালীতে সমস্যা হওয়ায় চিকিৎসার জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে ডা. ফারহানা আফরোজকে দেখানো হয়। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমার বোনের নাকের নেত্রনালী অপারেশন করতে হবে বলে জানান। আমার বোন ডাক্তারের পরামর্শে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ডা. মিজানুল হকের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার মিজানুল হক আমার বোনের চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান যে ৮ জানুয়ারি বোনের চোখের অপারেশন করাতে হবে এবং মোট খরচ হবে ৬ হাজার টাকা। চিকিৎসকের কথামতো বোন ৮ তারিখ সকালে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওইদিন ডা. মিজানুল হকসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৩/৪ জন ডাক্তার/নার্স আমার বোনের ডান চোখের অপারেশন সম্পন্ন করেন। অপারেশনের কিছু সময় পর ডাক্তার মিজানুল হক আমার মাকে বলে আপনাদের অপারেশনের বিল ১৫ হাজার টাকা আসছে। আমার মা ডাক্তারকে বলেন, আমাদের অপারেশন ফি হলো ৬ হাজার টাকা। কেন আমরা ১৫ হাজার টাকা দিতে যাব।

তখন ডাক্তার জানান যে, আমার বোনের চোখে যে ল্যান্স বসানো হয়েছে তার দাম ১৫ হাজার টাকা। তখন আমার মা ডাক্তারকে বলেন, আমার মেয়ের চোখের নেত্রনালী অপারেশন করার কথা, কিন্তু ল্যান্স কেন লাগিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর একজন নার্স আমার বোনের ওয়ার্ডে গিয়ে বলে ১২ হাজার টাকা দিলেই হবে। আপনাদের জন্য ৩ হাজার টাকা ছাড়। আমার বোন তখন বলেন, আমার নাকের নেত্রনালী অপারেশন না করে কেন চোখে ল্যান্স বসিয়েছেন, তখন নার্স কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান। 

মামলার এজাহারে আকাশ আরও উল্লেখ করেছেন, আমার বোনের চোখের নেত্রনালী অপারেশন করার পরিবর্তে চোখে ল্যান্স লাগিয়ে গুরুতর জখম করায় তার চোখ থেকে প্রচুর পানি পড়ছে এবং ব্যথায় ছটফট করছে। ডা. মিজানুল হককে বারবার ডাকা সত্ত্বেও সে আমার বোনের চোখের কোনো চিকিৎসা না করে হাসপাতাল থেকে চলে যান। বোন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমি বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে হাসপাতালের কোনো লোক আমার কথা না শুনেনি। তাই আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি। 

তবে অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসকের বক্তব্য জানা যায়নি। লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারি ডা. দেবাশীষ দত্ত জানিয়েছেন, অভিযোগটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় আমরা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে রোগীর যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। 

কেএম/জেডএস