দেশে করোনা সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে আবার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে বিধিনিষেধ। 

বিধিনিষেধে সব ধরনের যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদ থাকার কথা বলা হলেও দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ চালক-সহকারী এখনও টিকাই নেননি। সেই সঙ্গে মাস্ক পরতেও অনীহা তাদের। এছাড়া বাসগুলোতে যাত্রী তোলা হয়েছে এমনভাবে যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়।   

আজ (বৃহস্পতিবার) সকালের পর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে বাসগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়। 

কারওয়ান বাজারে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় নিউ ভিশনের চালক ও সহকারীর সঙ্গে। চালক ইদ্রিস জানান, তিনি করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। তার কাছে টিকা নেওয়ার সনদও রয়েছে। তবে তার সহকারী মিজান এখনও টিকা নেননি। তিনি বলেন, ‘মালিক টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে। সরকার না কি নতুন আইন করছে টিকা না নিলে গাড়িতে থাকন যাইব না।’

একই এলাকায় কথা হয় ইটিসি পরিবহনের একটি বাসের চালকের এক সহকারী হাবিবের সঙ্গে। হাবিব জানান, তিনি এখনও করোনার টিকা নেননি। স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের চালক ও সহকারীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দু’জনের একজনও টিকা নেননি। মালিকপক্ষ থেকে তাদের জরুরি ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তারা।

শাহবাগে ট্রান্সসিলভা, মেঘলা, মালঞ্চ, বিআরটিসি, ওয়েলকাম, বিকল্প, খাজাবাবা, বসুমতি শিকড়সহ আরও কয়েকটি পরিবহনের বাসের চালক ও সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগই টিকা নেননি। ট্রান্সসিলভা পরিবহনের চালকের সহকারী ইমরান বলেন, টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করছি। কিন্তু মেসেজ নাই, যার জন্য টিকা নেওয়া হয়নি। শুনছি, কালকে থেকে আমাদের গণহারে টিকা দেওয়া হবে।

মালঞ্চ পরিবহনের চালকের সহকারী ইবাদত শাহবাগে মাস্ক ছাড়াই যাত্রীদের বাসে তোলার জন্য হাঁকডাক দিচ্ছিলেন। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইতে ইবাদত বলেন, মাস্ক হাত থেকে পড়ে গেছে। এখনও করোনার টিকা নেননি বলেও জানান ইবাদত।  

করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণসহ ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এসব বিধিনিষেধ আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। তবে ট্রেন-বাসে অর্ধেক যাত্রী বহনের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা কার্যকর হবে ১৫ জানুয়ারি থেকে।   

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গতকাল বুধবার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকনেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের আগামী শনিবার থেকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। অবশ্য মালিক-শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বলেছেন, সব অফিস-আদালত খোলা রেখে যদি অর্ধেক যাত্রী বহন করা হয়, তাহলে পরিবহনের সংকট দেখা দিতে পারে। পরে রাতে  স্বাস্থ্যবিধি মেনে শনিবার থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিআরটিএ।  

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যত আসন তত যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে চান তারা। সব শ্রমিক যাতে টিকার আওতায় আসেন, সেটাতে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স দেখিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে টিকা যাতে নিতে পারেন, সে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন তিনি।

এনআই/এনএফ