সেলিনা হায়াৎ আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের পর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বললেন, নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করব। এছাড়া তৈমূর কাকা যে কাজগুলোর কথা বলেছেন, তার সঙ্গে কথা বলে সেগুলোও (বাস্তবায়ন) করার চেষ্টা করব।

জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়ে আইভী বলেন, আগামী পাঁচ বছর দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণে কাজ করব।

রোববার রাতে নির্বাচনে জয়ের পর নগরীর দেওভোগের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আবারও তাকে জনসেবার সুযোগ দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই জয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। এই জয়ে আবারও প্রমাণ হলো নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। 

আইভী বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি নেত্রীর প্রতি, যিনি আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন; আমার দলের প্রতি, যারা আস্থা নিয়ে আমার সঙ্গে কাজ করছেন। জনসাধারণ, আমার ভোটার ও নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা নিজের জীবন বাজি রেখে আমার জন্য কাজ করেছেন, তাদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন বেঁচে আছি শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই, জয় বাংলা বলতে চাই। 

জনগণের আস্থা অর্জনে কখনো মিথ্যা বলেননি দাবি করে আইভী বলেন, অযথা আশ্বাসও দেইনি। যেটা পেরেছি, সেটা বলেছি। সবচেয়ে বড় কথা মানুষকে ভালোবেসেছি। আমার দল আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন। নারায়নগঞ্জবাসীও তাকে বিমুখ করেনি। 

নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারণে এই পরাজয়- এ বিষয়ে আইভির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কীভাবে এই দাবি করেন আমি জানি না। এমন (সুষ্ঠু) নির্বাচন আমি আগে দেখিনি, এত সাংবাদিকও আগে নারায়ণগঞ্জের কোনো নির্বাচনে দেখিনি। সকালে আমি বলেছি ইভিএম ধীরে কাজ করছে। তা না হলে আমি আরও লাখের বেশি ভোটে জয়লাভ করতাম। 

নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে মন্তব্য করে আইভী বলেন, নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জয় নিয়ে আসার মধ্যেই সাফল্য। সবকিছুর মূলে জনশক্তি ও জনসমর্থন। তাদের সমর্থন না থাকলে আমি নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। 

এই নির্বাচনে ৬৯ হাজার ১০২ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতি মার্কার তৈমূর আলম খন্দকারকে পরাজিত করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে ১৯২টি কেন্দ্রে তার প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১টি ভোট।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৬৪টি কেন্দ্রের ফল প্রকাশ করেছে। তাতে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইভী পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৫৪৮ ভোট। হাতি মার্কার তৈমূর পান ২৮ হাজার ৬৬৯টি ভোট।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আইভী ও তৈমূর আলম ছাড়া মেয়র পদে লড়েন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন (বটগাছ) এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)। এছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নয়টি কাউন্সিলর পদে লড়েন ৩৪ জন প্রার্থী।

এর আগে পরপর দুইবার নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করেন। পরের বার ২০১৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনকে।

সিটি করপোরেশন হওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন আইভী। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন (এখন পৌর মেয়র বলা হয়)।

সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দুবার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদম রসুল পৌরসভা বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এসএইচআর/এইচকে/