ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরের বাসিন্দা শাহা আলমের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তার জরুরি অস্ত্রোপচার করা দরকার। এমন বাস্তবতায় বড় বোন নুরুন্নাহার ও ভগ্নিপতি আমির হোসেন বাবুর কাছে অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা চান শাহা আলম।

ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য বড় বোন নুরুন্নাহার টাকা নিয়ে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকাগামী বাস নুরুন্নাহারকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন নতুন রাস্তার মোড়ে (সংযোগ সড়ক) নামিয়ে দেয়। সে সময় নুরুন্নাহারকে আনতে শাহা আলম ও তার ভগ্নিপতি আমির হোসেন বাবু নতুন রাস্তার মোড়ে যান। পরে তারা তিনজন গাড়ি না পেয়ে হেঁটে বাবুবাজার ব্রিজের দিকে রওনা হন। ঝিলমিলের পাশ দিয়ে পাসপোর্ট অফিসের দিকে এগিয়ে যাওয়ামাত্রই ওত পেতে থাকা সশস্ত্র ডাকাত দল তাদের অস্ত্রের মুখে টেনেহিঁচড়ে পাশের খালে নামিয়ে ঝিলমিলের ভেতরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। ডাকাতদের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।

তখন রাত আনুমানিক ৯টা। ডাকাত দল কিডনির অস্ত্রোপচারের জন্য আনা টাকা, নুরুন্নাহারের স্বর্ণালংকার ও ভগ্নিপতির গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়।

ডাকাতরা অত্যন্ত পেশাদার ও পুলিশের তদন্ত পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত থাকায় তিনজনকে কিছু টাকা যাতায়াত ভাড়া ও ব্যক্তিগত মোবাইলগুলো দিয়ে ছেড়ে দেয়। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার পর শাহা আলম এবং তার বোন ও ভগ্নিপতি একে অন্যের হাতের বাঁধন খুলে ফেলে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সাহায্য চান।

তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় শাহা আলম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ২৬ ডিসেম্বর মামলা করেন।

ডাকাতির ওই মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ও ডিবি ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিবি ও থানা-পুলিশের যৌথ অভিযানে ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচজন গ্রেফতার হয়।

ওই পাঁচজন হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কদমতলী থানার রায়েরবাগের মো. রেজাউল (৪৫), মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার কুরীগাঁও এলাকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৪০), খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার ইসলামনগর এলাকার আজিজুল হক মোল্লা ওরফে আজিজ (৪০), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থানার চতলাখালি এলাকার মোহাম্মদ বশির পেদা (৪৫) ও বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার চর পশ্চিম জাঙ্গালিয়া এলাকার মোহাম্মদ কামাল হোসেন গাজী (৩৫)।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা মেট্রোর বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ডাকাতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার ক্রয়কারী তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী জামালকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিলমিলের জঙ্গল থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অনেক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে লুণ্ঠিত কিছু স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা ইতোমধ্যে উক্ত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী জামাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এইচকে